রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে ফারুক সরদার (২৬) নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থেকে একজন ও বিকালে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা থেকে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) শরীফ আল রাজীব। তিনি বলেন, ‘দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে ফারুক হত্যায় জড়িত দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি উত্তর দৌলতদিয়ার সোহরাব মণ্ডলপাড়ার সোনাউল্লাহ শেখের ছেলে ফজলুল হক ওরফে ফজল শেখ (৪০) আর সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি হোসেন মণ্ডলপাড়ার মোহন মণ্ডলের ছেলে ইউসুফ মণ্ডল (৩০)। ফজলুল হকের শ্যালক হলেন ইউসুফ। এর আগে এ ঘটনায় হুমায়ুন (২৫) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
নিহত ফারুক সরদার উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া সোহরাব মণ্ডলপাড়ার পল্লিচিকিৎসক শহিদুল ইসলামের ছেলে। এ ছাড়া মোহন মণ্ডলের ভায়রার ছেলে সে। ফারুক ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাজবাড়ী ডিবি পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দুপুর ১২টার দিকে হরিরামপুর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকা থেকে মামলার এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি ফজলুল হক এবং একই দিন বিকালে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা থেকে সন্দেহভাজন আসামি ইউসুফকে গ্রেফতার করে।
এর আগে গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার সঙ্গে থাকা স্থানীয় শামসু মাস্টারপাড়ার সালাম মোল্লার ছেলে বন্ধু আলামিন মোল্লা (২৫) এগিয়ে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় ফারুকের স্ত্রী সুমি আক্তার বাদী হয়ে রবিবার গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সোহরাব মণ্ডলপাড়ার রমজান ফকিরের ছেলে রিপন ফকির (২৬), তার ভাই মমিন ফকির (২৭), চাচাতো ভাই জহুরুল ফকির (২৩), আত্মীয় ফজলুল হক ও কাশেম ফকিরকে (৪০) আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, আধিপত্য বিস্তার ও বিরোধের জের ধরে ফারুককে হত্যা করা হয়েছে। প্রধান আসামি রিপন ফকির মোহন মণ্ডলের ভাগনি জামাই। প্রায় এক বছর আগে ফারুক ও রিপন যৌথভাবে স্থানীয় বাহিরচর দৌলতদিয়ায় মাটি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। ফারুক প্রায় ৭০ হাজার টাকা রিপনের কাছে পাওনা ছিল। বিষয়টি নিয়ে রিপন ও ফারুকের মধ্যে বিরোধ ছিল। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দৌলতদিয়া রেলস্টেশনের মেলা থেকে রিপন ও তার লোকজন চাঁদা তোলেন। এই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ান ফারুক। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় শহীদ মিনারের সামনে ফারুকের সঙ্গে রিপন, রেজাউল ও শিপনের বাগবিতণ্ডা হয়। প্রতিশোধ নিতে ফারুক লোকজন নিয়ে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে যৌনপল্লিতে রিপনের পান-সিগারেটের দোকানের সামনে যান। তখন রিপন ও তার লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুকের মাথা, পিঠ, হাত ও পায়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ সময় আলামিনকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।