টাঙ্গাইলে পল্লী বিদ্যুতের দুই কর্মচারীকে মারধর, কার্যালয় ঘেরাও

টাঙ্গাইলে অতিরিক্ত লোডশেডিং ও বেশি বিদ্যুৎ বিল আদায়ের অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুই কর্মীকে মারধর এবং কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে ভূঞাপুর উপজেলার কুঠিবয়ড়া বাজার এলাকায় দুই কর্মীকে মারধর ও পল্লী বিদ্যুতের বাসাইল কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটে। 

মারধরে পল্লী বিদ্যুতের দুই লাইনম্যান আহত হয়েছেন। তারা হলেন ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ ভূঞাপুর সাব-জোনাল কার্যালয়ের লাইনম্যান শাহীন আলম ও কায়সার আলম।

আহত কায়সার বলেন, ‘ভূঞাপুর উপজেলার কুঠিবয়ড়া বাজারে সেলিম মিয়ার দোকানে ছয় মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল। সেখানে গিয়ে তাকে বিল পরিশোধ করতে বলা হয়। কিন্তু বিল দিতে চাননি। পরে সংযোগ কেটে দিতে চাইলে সেলিম ও তার ছেলে হৃদয় আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের মারধরে আমি ও সহকর্মী শাহীন গুরুতর আহত হই। মারধরের পর আমাদের আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশের সহায়তায় মুক্তি পেয়ে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর ভূঞাপুর সাব-জোনাল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি জেনে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বকেয়া আদায় করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন তারা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভূঞাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান বলেন, ‘বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে গেলে লাইনম্যানদের সঙ্গে ওই দোকানির বাগবিতণ্ডা হয়। পরে দুই লাইনম্যানকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল কর্মকর্তা চিকিৎসক অর্নিকা রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আহত অবস্থায় দুজনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রিলিজ দেওয়া হয়। অপর আহত শাহীনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম আছে।’

এদিকে, ঘনঘন লোডশেডিং ও অতিরিক্ত বিল আদায়ের প্রতিবাদে বাসাইল পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করেছেন স্থানীয় লোকজন। বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের শতাধিক লোকজন কার্যালয় ঘেরাও করেন। তারা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে হট্টগোল করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম উপস্থিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে বাড়িঘরে চলে যান স্থানীয়রা।

কাঞ্চনপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মাসুদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দিন-রাত মিলে দুই ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ বিল দেয় দ্বিগুণ। এ বিষয় নিয়ে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে গেলে এক কর্মচারী আমাদের ওপর চড়াও হন। আমাদের শরীরে হাত তোলার জন্য তেড়ে আসেন। আমরা শুধু থামিয়েছি। তাদের ওপর হাত তুলিনি।’

একই এলাকার শমশের খান বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন-চার ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাই না। গত মাসে বিল দিয়েছি ১২০০ টাকা। এই মাসে এসেছে ২২০০ টাকা। দিনে ২০-২১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে এত বিল আসে কীভাবে, তার জবাবও দেয় না তারা। এজন্য সবাই মিলে কার্যালয় ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।’

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুতের বাসাইল জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অঞ্জন কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শনিবার এলাকার গাছপালা কাটার কাজের জন্য ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টাঙ্গাইল থেকে যে লাইনটি এসেছে, সেটির তার পুড়ে গিয়ে আরও তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। সেজন্য লোকজন একটি আবেদন নিয়ে কার্যালয়ে এসেছেন। এ নিয়ে কার্যালয়ের পিয়নের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। পিয়ন তাদের ওপর চড়াও হন। পরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়ে গেছেন। আমি আশ্বাস দিয়েছি। সোমবার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’

বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে লোকজন পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে গেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যাওয়ার পর তারা বাড়িতে চলে যান।’