দেশের বিরুদ্ধে অনেক কিছু ঘটছে, সবকিছু প্রকাশ করা সম্ভব নয়: শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘সামনে নানান রকমের গেম হবে। আপনারা মেন্টালি প্রস্তুত থাকেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে না, সারা দেশের বিরুদ্ধে হবে। দেশকে ধ্বংস করার জন্য হবে। আপনার আমার ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করার জন্য হবে। ভৌগোলিকভাবে অনেক কিছু ঘটছে। সব কিছু প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নম পার্কে নির্বাচনি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা এ দেশের বর্ডারে, যেখান দিয়ে রোহিঙ্গারা এসেছে, সেই জায়গার তারা দখল নিয়ে নিয়েছে। ওই দিকে চায়নার (চীন) বর্ডারও তারা দখলে নিয়ে নিয়েছে। এগুলো কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। সুতরাং আমরা একটা ক্রাইসিস ওভারকাম করতে যাচ্ছি। যা আসবে দেখা যাবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা হারবো না কখনও। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর ওপরে আমাদের ভরসা আছে।’

বড় বড় শক্তি জঘন্য খেলা নিয়ে মাঠে নেমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এবার বাংলাদেশের মানুষকে না খাইয়ে মারার পরিকল্পনা হবে। অনেক বড় বড় শক্তি এবার জঘন্য জঘন্য খেলা নিয়ে মাঠে নামবে। তারা অলরেডি নেমে গেছে। সারা পৃথিবীতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আপনি টাকা দিয়েও জিনিস কিনতে পারবেন না। এর কারণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের ওপরে হামলা। নতুন করে ইয়েমেনে হামলা। এ ছাড়া শুনতেছি ইরানের সঙ্গে ঝামেলা লেগে যেতে পারে। এটা হলে পৃথিবীর মানচিত্রে অনেক কিছু বদলে যাবে। এসব যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এমনও হচ্ছে, টাকা নিয়ে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বলে আসছেন, কেউ এক ইঞ্চি জায়গাও ফেলে রাখবেন না। কারণ, তিনি সুদূরপ্রসারী চিন্তা করেন। উনি বুঝতে পেরেছেন ক্রাইসিস আসছে।’

নির্বাচনের সময়ে তার কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়েছিল দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে আমি কোনও সরকারি অফিসারের সঙ্গে কথা বলিনি। কারণ, আমি আপনাদের বলেছিলাম ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন করবো। তবে এই আসনে যাতে আমার পার্সেন্টেজ ভোট কমে সে জন্য অনেক প্রক্রিয়া করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জে সকালে আমাদের বিশালসংখ্যক নারী ভোটার কেন্দ্রে গেছেন। সেখানে ভোটারদের বলা হলো, ফোন নিয়ে ভেতরে যেতে পারবেন না। তখন আমি মা-বাবার কবরের সামনে বসে দোয়া করছিলাম। সে সময় আমাকে একের পর এক ফোন করা হচ্ছিল। কিছু কিছু জায়গায় পুলিশ, কিছু কিছু জায়গায় জুডিসিয়াল ডিপার্টমেন্ট আর কিছু জায়গায় প্রিসাইডিং অফিসার ফোন নিয়ে ভেতরে যেতে দিচ্ছিল না। ধরেন, ১০০ কেন্দ্রে যদি আমার ৩০০ করে নারী ভোটার ফেরত যায়, তাহলে ৩০ হাজার লোক ফেরত গেছে। এই ঘটনায় আমি জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং জেলা পুলিশ সুপারকে জানালে ওনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। ফতুল্লা পাইলট স্কুলে কেউ কেউ বলেছেন, তিন লাখ টাকা দেন, না হলে ভোট স্লো হয়ে যাবে। আমি তিন টাকা দিইনি কোথাও। নির্বাচনে আমার যেমন প্রত্যাশা ছিল ৪১-৪২ শতাংশ ভোট পড়বে, সেটা থেকে ৮ শতাংশ ভোট মাইনাস হয়েছে।’

রাজনীতিকে ইবাদত হিসেবে নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি ধান্দা করি নাই। রাজনীতি যদি ধান্দা হিসেবে নিতাম, ব্যবসা হিসেবে নিতাম, তাহলে ২০২৩ সালে এসে বাড়িঘর বন্ধক রাখতে হয় না। আমি রাজনীতি মানে বুঝি ইবাদত, মানুষের সেবা করা। এই সিট শেখ হাসিনার আমানত, এই সিট আওয়ামী লীগের আমানত। আমার দলের ভেতরে যদি কেউ খারাপ লোক থেকে থাকে তাকে আমি আমার সঙ্গে রাখবো না। আই ডোন্ট কেয়ার, সে কে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. শওকত আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু প্রমুখ।