কিশোরগঞ্জ-১ আসন

সৈয়দ নজরুলের দুই সন্তানের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

বোন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। বড়ভাইও স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটযুদ্ধে। কিশোরগঞ্জ-১ আসনে দুই ভাইবোনের ভোটযুদ্ধ এখন আলোচনায় শীর্ষে। তারা দুই জনই আওয়ামী লীগ নেতা ও দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান।

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে। বড়ভাই আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর পর থেকে তিনি এ আসনের এমপি। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু মনোনয়ন পেলেও স্বতিতে নেই। তার আপন বড়ভাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম স্বতন্ত্র হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাকে সমর্থন দিয়েছেন চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু। তার মতো দলের পদ-পদবীতে রয়েছেন, এমন বেশ কয়েকজন নেতাও স্বতন্ত্রপ্রার্থীর হয়ে মাঠে কাজ করছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী তার দলীয় নেতাকর্মীদের একসঙ্গে পাশে পাচ্ছেন না। যে যার মতো নির্বাচনে কাজ কাজ করছেন। বেশ কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্রপ্রার্থীর পক্ষে একেবারে প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখছেন। কেউ আবার কিছুটা রাখঢাক করে। দুই পক্ষের কোনও পক্ষে না গিয়ে অনেকে আবার নিরব রয়েছেন।

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, স্বতন্ত্রপ্রার্থী সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম রাজনীতিতে নতুন হলেও সৈয়দ পরিবারের সন্তান হিসেবে তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আর দলে দুই প্রার্থীকে নিয়ে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়ায় তা থেকে মূলত সুবিধা আদায় করে নেবেন তিনি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাকিয়া নূর লিপিকে এ ভোটযুদ্ধে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে।

এদিকে দলীয় না স্বতন্ত্রপ্রার্থী— কাকে সমর্থন দেবেন, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটিতে রয়েছেন, এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের নেতাকর্মীরা দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে বেশ বিব্রত ও বেকায়দায় রয়েছেন। কারণ তারা দুজনই সৈয়দ পরিবারের সন্তান। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলেমেয়ে। ফলে নির্বাচনে তারা উভয়েই দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে পেতে চাইছেন। আবার দলের পক্ষ থেকে নির্দেশনা না থাকায়, স্বতন্ত্রপ্রার্থীকে মুখের ওপর নাও করা যাচ্ছে না।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে তিনি শেষ মুহূর্তে আরেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী, চাচাতো ভাই সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলামকে সমর্থন দিয়ে নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। একইসঙ্গে তার অনুসারীদের স্বতন্ত্রপ্রার্থীর হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রভাবশালী নেতা গত ১৭ ডিসেম্বর জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সমাবেশ করে অনুগত কর্মীদের প্রতি এ নির্দেশনা দেন। তখন সেখানে স্বতন্ত্রপ্রার্থী চাচাতো ভাই সাফায়েতুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। প্রতীক বরাদ্দের পর তিনি ঈগল মার্কার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু বলেন, দলের নেতাকর্মীরা এখন মুক্তভাবে নির্বাচন করছেন। দলের কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায় থেকে কোনও দিক-নির্দেশনা নেই। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যেভাবে আছে আমরাও সেভাবে যার যার মতো কাজ করছি।

এদিকে ভাইবোনের প্রচার-প্রাচরণা বেশ জমে উঠেছে কিশোরগঞ্জে। তাদের পোস্টার-ব্যানারে সদর ও হোসেনপুর উপজেলার রাস্তাঘাট ছেয়ে গেছে, চলছে মাইকিং। দুই জনই সভা-সমাবেশে বড়ভাই আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্বপ্ন ও অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বলেন, তিনি যেসব উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন, ভোটাররা সেগুলোর বিচার বিবেচনা করে ভোট দেবেন। আশা করি এবারও ভোটাররা এমপি হিসেবে আমাকে বেছে নেবেন।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম বলেন, রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক হয় না। এটি আদর্শের ভিত্তিতে চলে। আমার মনে হয়েছে, কিশোরগঞ্জের উন্নয়নসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে চলছে না। এ কারণে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন সঠিকপথে পরিচালিত হবে।

আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আবদুল হাই লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ প্রার্থী পেশায় চিকিৎসক। ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে তার বেশ পরিচিতি রয়েছে। তাছাড়া একবার কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। 

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মোট সাত জন প্রার্থী থাকলেও এ তিন জন ছাড়া অন্য কোনও প্রার্থীর প্রচার প্রচারণা চোখে পড়ছে না। ওইসব প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার কিংবা নির্বাচনি অফিসও দেখা যায়নি। ওই প্রার্থীরা হলেন—গণতন্ত্রী পার্টির  অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন (কবুতর), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোবারক হোসেন (ডাব), ইসলামী ঐক্যজোটের মো. আশরাফ উদ্দিন (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আনোয়ারুল কিবরিয়া (আম) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. আব্দুল আউয়াল (ছড়ি)।

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৩ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬০ হাজার ৪০৪ জন। নারী ভোটার ২ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭১ জন।