বিস্ফোরণে আহত ও নিহতের মধ্যে বেশিরভাগই পরিবারের উপাজনক্ষম ব্যক্তি-গার্মেন্ট কর্মী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক পরিবার বাকরুদ্ধ। যারা আহত হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন তাদের অনেকের পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য নেই এই চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করার।
বায়তুস সালাত জামে মসজিদ থেকে প্রায় ৫শ’ গজ দূরে তল্লা খামারবাড়ি এলাকায় একটি টিনশেড রুম নিয়ে ভাড়া থাকেন ডেকোরেটর কর্মচারী স্বপন মিয়া। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে মেজ সিফাত। এবার এসএসসি পাস করেছে। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ নিয়ে টাকা জোগাড় করছিলেন এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার জন্য। শুক্রবার রাতে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে বিস্ফোরণে ঝলসে যায় তার পুরো শরীর। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে ছেলেকে ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে দেখবে সেই পরিবহন ভাড়াটুকু পর্যন্ত নেই। তাই ঘরে বসেই দোয়া করছেন আর বিলাপ করে কাঁদছেন মা। আর বলছেন হাতে মাত্র ৫০ টাকা আছে। ঘরে চাল নেই যে এক বেলা রান্না করে খাবেন। তিনি বলেন, ছেলেটার কী অবস্থা, টাকার জন্য দেখতে যেতে পারছি না।
একই এলাকার ইমাম হোসেন ও আমজাদ হোসেন বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। দুজনই আপন ভায়রা ভাই। শ্বশুরবাড়িতে থেকে কাজ করেন দুটি পৃথক গার্মেন্টসে। উপার্জনক্ষম দুজন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে থাকায় মহা চিন্তায় পড়েছেন তাদের শ্বশুর মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, দুই মেয়ের জামাইয়ের চিকিৎসা ব্যয় ভার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের লালন-পালন করা ক্ষমতা আমার নেই। আমি একটি কমিউনিটি সেন্টারে ডেকোরেটর শ্রমিকের কাজ করি। করোনার কারণে গত চার মাস ধরে কোনও কাজ নেই। অনেক টানাপড়েনের মধ্যে চলছে সংসার। তার মধ্যেই এই দুর্ঘটনায় আমার মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে! তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসার ব্যয়সহ পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে।
ঘটনার সময় মসজিদের অল্প দূরে ছিলেন বাপ্পিসহ বেশ কয়েকজন। তারা জানান, আটটায় এশার আজান হয়। সোয়া আটটায় জামাত। এর মধ্যে দুইবার বিদ্যুৎ গিয়ে আসে। দ্বিতীয়বার বিদ্যুৎ আসার পরপরই প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। ‘মাগো বাবাগো’ চিৎকার শোনা যায়। মসজিদের বাইরে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। কয়েকজনকে দেখি মসজিদ থেকে বের হয়ে সেই পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে পানি নেভানোর জন্য। তাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশেই চামড়া নেই। পুড়ে গেছে শরীরের কাপড়। এলাকাবাসী দৌড়ে এসে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ও নগরীর মন্ডলপাড়া এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপতালে নিয়ে যায়।