২০১১ সালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামে মায়ের দেওয়া ২৯ শতাংশ জমির ওপর ১২ জন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে একটি বিশেষায়িত স্কুলের যাত্রা শুরু করেন রবিউল। স্কুলটির পুরো নাম বিকনিং লাইট অর্গানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি সংক্ষেপে ‘ব্লুমস’। দেখতে দেখতে আট বছর অতিক্রম করতে চলছে স্কুলটি। টিনের ঘর থেকে এখন পরিণত হয়েছে তিন কক্ষবিশিষ্ট ৬০ ফুট লম্বা পাকা দালানে। বর্তমানে এই স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২। পাঠদানের পাশাপাশি স্কুল আঙিনায় তৈরি করা হয়েছে শিশুদের বিনোদনের দোলনাসহ কয়েকটি রাইডস। রবিউলের এই স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছে বিদেশি সংস্থা এসএসটিএস।
ব্লুমসের শিক্ষার্থী কাউসার আহম্মেদ শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাসিখুশি আর খোশ মেজাজে থাকে সারাক্ষণ। স্কুলে আসলে লেখাপড়ার পাশাপাশি গান গাইতে পছন্দ করে কাউসার। ব্লুমসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাউসারের মতো আরও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি সেখানে আনন্দ উল্লাস করছে। কেউ গান গাইছে আবার কেউ করছে কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ফিরোজ মিয়া ব্লুমসের ছাত্র। তার আঁকা ছবি মুগ্ধ করবে যে কাউকে। ফিরোজের মতো আলমগীর, শিলা রানী, শাকিব আল হাসান, মহিদুল, কাউসারসহ ৪২ জন প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর এই স্কুলে পড়ছে। তাদের অনেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি চিত্রাঙ্কনেও পারদর্শী।
রবিউলের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস্ বলেন, বড় ভাইয়ের স্বপ্নের ব্লুমসের শিক্ষার্থী বেড়ে আজ হয়েছে ৪২ জন। স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে ব্লুমস পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতরে এটি ‘ব্লুমস কাটিগ্রাম’ নামে একটি অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে নিবন্ধিত হয়।
ব্লুমসের পরিচালক (প্রশাসন) ও শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসি এবং অটিজমসহ একাধিক প্রতিবন্ধী শিশুকে সপ্তাহে চারদিন পাঠদান করানো হয়। বর্ণমালা পরিচিতি, গুনতে শেখানো, ছড়া শেখানো ও সরকারি স্কুলগামী প্রতিবন্ধী শিশুদেরও পাঠে সহযোগিতা ছাড়াও খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে স্কুল প্রাঙ্গণে। ২০১৭ সাল থেকে স্কুলটিতে ‘ডে-মিল’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ স্থানীয়দের সহযোগিতায় হচ্ছে।’
কথা হয় ওই বিশেষায়িত স্কুলের দুই শিক্ষক শামীমা নাসরিন শাওন ও শামীমা নাসরিন সাথীর সঙ্গে। তারা জানান, নামমাত্র সম্মানী নিয়ে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে তারা রবিউল করিমের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এ স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ব্লুমসে ক্লাস নেন তারা। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সমাজে অবহেলিত এই শিশুদের জন্য কিছু করতে পেরে তৃপ্ত ও গর্ববোধ করেন বলে জানান তারা।