ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

জয়পুরহাট

জয়পুরহাটের ইউপি চেয়ারম্যান এ কে আজাদ হত্যা মামলার ৩ বছর পর ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি। বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল বাহারের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক জিয়াউর রহমান।

অভিযুক্ত আসামিরা হলো, হত্যার পরিকল্পনাকারী নিহত চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা পরিষদের সদস্য ও ভাদসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাতেম আলী, এজাহার ভুক্ত ১নং আসামি মুন্না পারভেজ, সৈকত হোসেন, আ. হাকিম, সাদ্দাম হোসেন, হাবিব মিয়া, রাজিব হোসেন, শাহিনুর ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, নাজিম, তৌহিদ হোসেন ও সোহাগ হোসেন।

মামলার অভিযোগ পত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৪ জুন রাত পৌনে ১০টার দিকে চেয়ারম্যান এ কে আজাদ এক প্রতিবেশীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছে গোপালপুর বাজারে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আসামি মুন্না পারভেজ ও তার দল আজাদের ওপর হামলা চালায়। তারা উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও গুলি করে পালিয়ে যায়। এসময় নয়ন মণ্ডল নামে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়। মামলার সাক্ষীরা আহতকে উদ্ধার করে পুলিশ ভ্যানে করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। পরে তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যালে এবং পপুলার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জুন ভোরে তার মৃত্যু হয়।

অভিযোগ পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই ঘটনায় নিহতের ভাই এনামুল হক কাস্মির বাদী হয়ে ৫ জুন জয়পুরহাট সদর থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬/৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত করেন জয়পুরহাট সদর থানার পরিদর্শক ফরিদ হোসেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের এপ্রিলে মাসে মামলাটি সিআইডতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মামলার তদন্ত করেন। সব শেষে ২০১৮ সালের নভেম্বরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডি’র পরিদর্শক জিয়াউর রহমান। তদন্তের সময় আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের ও জনগণের দেওয়া তথ্যে তিনি অভিযোগের সত্যতা পান। অভিযোগ পত্রে বলা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৩৪ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এ মামলার আসামি সোহেল রানা ও মনির হোসেন আগেই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে ৩০ মার্চ ইউপি নির্বাচনে নিহত একে আজাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আসামি হাতেম আলী। একে আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও হাতেম আলীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচনের সময় হাতেম আলীর নির্দেশে আসামি মুন্না পারভেজ এ কে আজাদের নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করে। এ কে আজাদ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় তাকে বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় শপথ গ্রহণের পর আসামি মুন্না পারভেজ, নাজিম, সৈকত পরাজিত প্রার্থী হাতেম আলীর কাছ থেকে ২লাখ টাকা নিয়ে চেয়ারম্যানকে হত্যা করে। আসামি মুন্না পারভেজ ও সৈকতসহ গ্রেফতররা ১৬১ ও ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেন।

এদিকে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিলের পর নিহতের পরিবার কিছুটা স্বস্তিবোধ করছে। নিহত চেয়ারম্যানের মা সাহারা বেগম জানান, তার ছেলের হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।

নিহতের ছোট ভাই ভাদসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন জানান, তার ভাইকে হত্যার পরিকল্পনাকারী এখনো আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্য হিসাবে বহাল রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, ‘অভিযোগপত্র নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। আদালত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করলে তার পরিবারসহ এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে আসবে।’