চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে পণ্য রফতানি ও কনটেইনার পরিবহন

চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে পণ্য রফতানি, কার্গো ও কনটেইনার পরিবহন। একইভাবে রফতানি আয় বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে বন্দরের ১৩৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এ তথ্য জানান। 

বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত সভায় বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩৭ হাজার ১৯১.৩২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৩ শতাংশ বেশি। রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশ পণ্য বন্দরের মাধ্যমে পরিবহন হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে রফতানি আয় গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১১.৪৪ শতাংশ বেড়েছে।’ 

এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। কনটেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুদিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অন-অ্যারাইভাল জেটিতে ভিড়ছে। বন্দরে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) কনটেইনার পরিবহন ২০২৩-২০২৪-এর একই সময়ের তুলনায় ৫.০১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে জেনারেল কার্গো পরিবহন হয়েছে ৯ কোটি ৭১ লাখ ১৩ হাজার ১৬১ মেট্রিক টন; যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৯৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে জাহাজ যাতায়াত করেছে তিন হাজার ৫৮টি।’ 

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় ডেলিভারি না যাওয়ায় শেড ও ইয়ার্ডে লোহার বাক্স, রাসায়নিক পণ্য এবং কনটেইনার দীর্ঘদিন পড়েছিল। এই জাতীয় পণ্য বন্দরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত ৩৬৭ বাক্স ৬১৭ টিইইউএস কনটেইনার ধ্বংস করা হয় এবং
৩৫৭ বাক্স ৬৪০ টিইইউএস কনটেইনার অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া গত গত ২৪ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বন্দর পরিদর্শন করেন। তার নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে শেডের মাঠ থেকে নিলাম যোগ্য ৩০৪টি গাড়ি সরানো হয়। গাড়িগুলো বর্তমানে বন্দরের বহুতল কার শেডে রয়েছে। কাস্টমস কর্তৃক গাড়িসমূহ নিলামের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ওই স্থানে ইয়ার্ড নির্মাণ করে কনটেইনার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আধুনিক পোর্ট ইকোসিস্টেম, পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেম, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এটিকে বিশ্বমানের বন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শতকরা ৮০ ভাগ কাজ ডি-নথি পদ্ধতিতে সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডি-নথির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পেনশনভোগীদের পেনশন নথিসমূহ ডিজিটাল আর্কাইভ করে সংরক্ষণ করা সংক্রান্ত কাজটি চালু হয়েছে। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি ক্রয় সম্পাদনের লক্ষ্যে ক্রয় সংক্রান্ত কাজ ই-জিপিতে সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়া যাতে অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক এবং বৈষম্যহীন হয় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘কনটেইনার টার্মিনাল-১ এবং কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের জন্য পিপিপি অংশীদার পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে বন্দরের কার্যক্রম চলমান আছে। গত ২০ এপ্রিল বে-টার্মিনালের ডিপিপি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বে-টার্মিনালের চ্যানেলে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বে-টার্মিনাল প্রকল্প আগামী ২০২৯-২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটির প্যাকেজ-১ (দুটি জেটি নির্মাণ)-এর জন্য জাপানিজ প্রতিষ্ঠান পেন্টাওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও টোয়া করপোরেশনের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ২২ এপ্রিল। এটি দেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর ২০২৯ সাল নাগাদ অপারেশনে আসবে। বে-টার্মিনাল হয়ে গেলে টানেলে যানবাহন চলাচল বাড়বে।’