কক্সবাজার জেলায় কাজের সন্ধানে এসে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার এক গ্রামের ছয় শ্রমিক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। পেশায় তারা রাজমিস্ত্রি। সাত দিন ধরে নিখোঁজ থাকা শ্রমিকরা সবাই গত ১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) কাজের জন্য জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রাম থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে বের হয়েছিলেন।
পুলিশ বলছে, তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ নিখোঁজদের মধ্যে দুই জনের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে অবস্থান টেকনাফের রাহারছড়া এলাকা পাওয়া গেছে। এদিকে টেকনাফের রাহারছড়া মানবপাচারকারী ও অপহরণকারীদের মূল আস্তানা। তাই সন্দেহ করা হচ্ছে তারা এই চক্রের ফাঁদে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ থানার ওসি জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘কক্সবাজারের কাজের উদ্দেশে বের হওয়া আমার এলাকার ছয় যুবক নিখোঁজ রয়েছে। তারা এর আগেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের কাজ করতে গিয়েছিল। আমরা পরিবারকে সহায়তা করছি। তবে এদের লোকেশন টেকনাফের রাহারছড়া গ্রামে পাওয়া যাচ্ছে। তাই সেখানকার থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।’
ছয় যুবক নিখোঁজের বিষয়টি জেনেছেন উল্লেখ করে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমরাও তাদের লোকেশন রাহারছড়া এলাকায় পাচ্ছি। বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কেননা এসব এলাকায় অপহরণ ও মানবপাচার চক্রের আনাগোনা বেশি।’
নিখোঁজ ছয় জন হলেন- জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের ফারুক আহমদের ছেলে মারুফ আহমদ (১৮), আজির উদ্দিনের ছেলে শাহিন আহমদ (২১), মৃত লুকুছ মিয়ার ছেলে রশিদ আহমদ (২০), সফর উদ্দিনের ছেলে খালেদ হাসান (১৯), মৃত সরবদির ছেলে আব্দুল জলিল (৫৫) ও মৃত দুরাই মিয়ার ছেলে এমাদ উদ্দিন (২২)।
নিখোঁজ পরিবারের ভাষ্যমতে, গত ১৫ এপ্রিল বিকালে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার খলাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম লোহারমহল গ্রামের পাঁচ তরুণসহ ছয় জন কাজের জন্য কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। ১৬ এপ্রিল কক্সবাজার পৌঁছার পর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারে চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। নিখোঁজ সবাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
নিখোঁজ রশিদের ভাই আব্দুল বাছিত বলেন, ‘রশিদ কয়েক বছর থেকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতো। বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল। এবার কক্সবাজার যাওয়ার পর থেকে রশিদসহ সঙ্গে থাকা সবার মোবাইল ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তাদের লোকেশন টেকনাফের রাহারছড়া পাওয়া যাচ্ছে। আমরা খুব চিন্তিত কারণ টেকনাফ অপহরণ এবং মানবপাচার প্রবণ এলাকা।’
জকিগঞ্জ উপজেলার চৌকিদার ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমার এলাকার ছয় শ্রমিক প্রায় সময় কক্সবাজারের কাজ করতে যায় বাবুল নামে এক ঠিকাদারের অধীনে। বাবুল ঠিকাদারের কাজ না থাকায় টেকনাফের এক পরিচিত ছেলের সঙ্গে টেকনাফে কাজ করতে বের হয়। তখন থেকে তাদের ফোন বন্ধ রয়েছে।’
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছি। আমিও চেষ্টা করছি তাদের খোঁজ নেওয়ার জন্য। তাদের লোকেশন যে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে, সেটি ভয়ংকর এলাকা। কেননা এর আগেও থ্রি মার্ডার সেখানে (রাহারছড়া) হয়েছিল।’