এবার খাগড়াছড়িতে দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণ, মোবাইল টাওয়ার বন্ধ ৩ মাস

এবার অস্ত্রের মুখে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির (রবি) দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার উপজেলার ময়ূরখীল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

অপহরণের শিকার দুই টেকনিশিয়ানের নাম মো. ইসমাইল (৩৫) ও আব্রে মারমা (২৫)।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি দীঘিনালা, মাটিরাঙা ও মানিকছড়ি উপজেলার আটটি মোবাইল টাওয়ারের যন্ত্রাংশ ভাঙচুর করেছিল দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় এখনও জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। ফলে পাহাড়ে টাওয়ারগুলোর কার্যক্রম অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মোবাইল কোম্পানি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২২ জানুয়ারি ভোরে একযোগে দীঘিনালা, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙা উপজেলার আটটি টাওয়ার ভাঙচুর ও আগুনে জ্বালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে দুর্বৃত্তরা। এরপর হতে ক্ষতিগ্রস্ত টাওয়ারের আওতায় থাকা কয়েক হাজার মোবাইল গ্রাহক তিন মাস ধরে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন।

শনিবার বিকালে উপজেলার ধর্মঘরস্থ (চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কসংলগ্ন) ময়ূরখীল বিলে টাওয়ার মেরামত করতে যান দুজন টেকনিশিয়ান। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির হয় কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। টেকনিশিয়ানদের টাওয়ার থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। কিন্তু কী কারণে টাওয়ারগুলোতে দুর্বৃত্তরা হামলা-ভাঙচুর করছে, সেটির সদুত্তর মিলছে না প্রশাসনের কাছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, পাহাড়ের সব ব্যবসায় সশস্ত্র গোষ্ঠীকে মোটা অঙ্কের বার্ষিক চাঁদা দিতে হয়। এক্ষেত্রে রবি কোম্পানির সঙ্গে সশস্ত্র কোনও গোষ্ঠীর অমিল বা গরমিল হওয়ার রেশ এটি।

মানিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ময়ূরখীল বিলে রবি টাওয়ার মেরামতে এসে দুই মেকানিক অপহৃতের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। তবে নিশ্চিত হতে পারিনি।’

মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল বলেন, ‘২২ জানুয়ারি সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত রবি টাওয়ার মেরামত করতে এসে দুজন টেকনিশিয়ান নিখোঁজ হয়েছে বলে লোকমুখে শুনেছি। তবে এটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লোকমুখে শোনা কথার সত্যতা নিশ্চিত করাও কঠিন। তারপরও আমরা খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। গত ২২ জানুয়ারি রাতে একযোগে দীঘিনালা, মাটিরাঙা ও মানিকছড়ি উপজেলার আটটি মোবাইল টাওয়ারের যন্ত্রাংশ ভাঙচুর ও তছনছ করেছে সন্ত্রাসীরা।’

এর আগে গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী খাগড়াছড়িতে এসে অপহরণের শিকার হন। তারা হলেন- পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিশন চাকমা, চবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো এবং চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা প্রত্যেককে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

ওই দিন সকালে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশাযোগে খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল জায়গায় তাদের গাড়ি আটকানো হয়। এ সময় টমটম গাড়ির চালকসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চালককে ছেড়ে দিলেও পাঁচ জন শিক্ষার্থীর খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।