রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক ইউক্রেনের হামলায় নিহত

রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫) প্রাণ হারিয়েছেন। রাশিয়া গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির নামে দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন ওই যুবক। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে এক সহযোদ্ধার ফোনে নিহত হওয়ার খবর পৌঁছালে তার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়েল্ডারের কাজ শিখে সংসারের সচ্ছলতা আর নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আকরাম। তিন ভাই ও দুই বোনসহ পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আকরাম ছিল সবার বড়। আকরামদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী তার দিন মজুর পিতা মোরশেদ মিয়া ভরসা। স্ত্রী, ছেলে ও কন্যা নিয়ে কোনরকমে দিনাতিপাত করছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

এর মধ্যে আকরামের এক বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন বাবা মোরশেদ। এ অবস্থায় ওয়েল্ডারের কাজ শিখিয়ে আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় ১১ মাস আগে রাশিয়া যান। এরপর গত আট মাস সেখানকার একটি চায়না কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে চাকরি করেন। বেতন খুব বেশি না পেলেও তার উপার্জনে পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। ফলে মোরশেদ মিয়ার অসচ্ছল পরিবারটি সচ্ছলতার স্বপ্ন বুনতে থাকে।

কিন্তু বিগত আড়াই মাস আগে আকরাম দালালের প্রলোভনে পড়ে রুশ সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যুক্ত হন। অংশ নেন ইউক্রেন যুদ্ধে। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ছবিও নিজের ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন তিনি। কিন্তু ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার স্বপ্নের যাত্রা।

আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া জানান, কোম্পানিতে ভালো বেতন না পাওয়ায় দালালদের প্রলোভনে পড়ে বিগত আড়াই মাস আগে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে আকরাম যোগ দেয় রুশ সেনাবাহিনীতে। শর্ত ছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সম্মুখসারিতে থাকার। এতে পরিবারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হলেও আকরাম জানিয়েছে, তার আর ফিরে আসার উপায় নেই। এরই মধ্যে আকরাম বাবাকে জানিয়েছিল, তার রাশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চার লাখ টাকা জমা হয়েছে।

আকরামের মা মোবিনা বেগম কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানান, যুদ্ধ চলাকালে ছেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হলেও গত ১৩ এপ্রিল থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশিয়ায় অবস্থানরত পরিচিতজনরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না। শুক্রবার দুপুরে তার এক সহযোদ্ধা ফোন করে জানায়, যুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মিসাইল হামলায় আকরাম নিহত হয়েছে। ফোনে জানানো হয়, আকরামের ইউনিটের কয়েকজন যোদ্ধা ইউক্রেন বাহিনীর মিসাইল হামলায় মারা গেছে। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে আকরামের মৃত্যুর খবরে তার বাড়ি আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। ছেলের ছবি নিয়ে মা মোবিনা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শোকে হতবিহবল পরিবারের অন্য সদস্যরা। শোকাহত পরিবারের সদস্যরা নিহতের লাশ দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ পেতে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, আমি বিকালে এ ধরনের একটি খবর লোক মারফতে জানতে পেরেছি। পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করলে, সঠিক কাগজ পত্রসহ যুদ্ধের এলাকার নাম বলতে পারলে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।