শিক্ষার্থীদের অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট, লাঠিপেটায় আহত ৩০

ছয় দফা আদায়ে কুমিল্লার কোটবাড়ীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয়মুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্তত ৯-১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।  

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে কোটবাড়ী নন্দনপুর এলাকায় এসে মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ২টা পর্যন্ত অবরোধ চলে তাদের।

পুলিশ, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেন। দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টার অবরোধে মহাসড়কের ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী লেনে অন্তত ৯-১০ কিলোমিটারে যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা ২টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তারপর শুরু হয় এই ইটপাটকেল নিক্ষেপ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন।

এ সময় লাঠিপেটায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। তাদের কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বেলা সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় প্রায় দুই হাজার পলিটেকনিক শিক্ষার্থী ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রিট বাতিলসহ ছয় দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্পূর্ণভাবে অবরোধ করে রাখে, যা টানা দুই ঘণ্টা ধরে স্থায়ী ছিল। এই একমাত্র মহাসড়কটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ রুট হিসেবে পরিচিত। যার বিকল্প কোনও সড়ক নেই। ফলে অবরোধের কারণে কুমিল্লা অঞ্চলে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে বারবার অনুরোধ জানায় এবং সতর্ক করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাতে কর্ণপাত না করায় সেনাবাহিনী সতর্কতামূলকভাবে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মহাসড়কে যান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।

কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ মো. মাজারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‌‘মহাসড়কে ধাওয়ার ঘটনায় আমাদের ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে যাদের জখম রয়েছে তাদের কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন আবদুল করিম খন্দকার বলেন, ‘আমাদের এখানে আহত হয়ে কয়েকজন চিকিৎসার জন্য এসেছিল। তার মাঝে ফয়সাল নামের এক শিক্ষার্থী বেশি আহত হয়েছে। অন্যরা রেজিস্ট্রিভুক্ত না করেই চিকিৎসাসেবা নিয়ে চলে যায়। ফয়সালও চিকিৎসা শেষে চলে গেছে।’

কুমিল্লার ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার বলেন, ‘বেলা ২টা পর্যন্ত ৯-১০ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় যানজট ছিল। যেসব গাড়ি আটকা পড়েছে আমরা চেষ্টা করেছি সেগুলো যেন উল্টো পথে না আসে। দুপুর ২টায় যান চলাচল শুরু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ রেফাঈ আবিদ বলেন, আমরা বিক্ষোভকারীদের বারবার বলছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে সরে যাওয়ার জন্য। তারা বলছে, কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত আসলে মহাসড়ক থেকে সরবে, তার আগে সরবে না। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সারা দেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়ক বন্ধ থাকায় চালক ও যাত্রীরা যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতি হচ্ছিল। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিয়েছে।

নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী একটি পরিবহনের বাসচালক আমির হোসেন বলেন, ‘কোটবাড়ী এলাকায় দুই ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে আছি। শিক্ষার্থীরা এভাবে মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন না করলেও পারতেন।’