‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে ২০ সংগঠনকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানমঞ্চে তুলতে নিষেধ

চট্টগ্রামে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অন্তত ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ডিসি হিলের পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মঞ্চে তুলতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসন থেকে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সংগঠকদের কাছে এ তালিকা পাঠানো হয়। পরে ফোন করে তালিকাভুক্ত সংগঠনগুলোকে সোমবারের অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার জন্য বলা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ খোকন। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, নরেন আবৃত্তি একাডেমি, খেলাঘর, রক্তকরবী, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ড্যান্স মুভমেন্ট, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ড্যান্স, ঘুঙুর নৃত্য একাডেমি অন্যতম।

এর আগে সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদযাপন মঞ্চ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন করে। ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার চিহ্নিত দোসরদের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠান উদযাপন আয়োজনের প্রতিবাদে’ এ মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মূলত জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), বিএনপির সহযোগী সংগঠন মিলে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক বরাবরে দেওয়া স্মারকলিপিতে এ সংগঠনগুলোকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনের বিষয়ে জাসাস চট্টগ্রামের সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ (শিপন) বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের দোসররা নববর্ষ অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। আমরা এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছি। ডিসিকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছি। তারা নববর্ষের অনুষ্ঠান করতে পারবে না।’

ডিসি হিলে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। এখানে প্রায় ৫৫টি সংগঠন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য নাম নিবন্ধন করেছে। শুরু থেকে অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়েও দেনদরবার করতে হয়। এখন নতুন করে ২০টি সংগঠনকে বাদ দিতে বলায় বিপাকে পড়েন আয়োজকরা।

পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ বলেন, ‘বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার আমাকে একটা তালিকা পাঠান। পরে ফোন দিয়ে বলা হয় এ সংগঠনগুলোকে মঞ্চে তোলা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তারা নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর। স্টাফ অফিসারকে জানিয়ে দিয়েছি কোনও সংগঠনকে বাদ দিতে আমরা পারবো না। প্রয়োজনে ডিসি হিলের অনুমতি বাতিল করে চিঠি দিয়ে দিক আমাদের। কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে মঞ্চে তুলবো না। কিন্তু সংগঠন বাদ দিতে পারবো না।’

জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার মো. ইস্রাফিল জাহান তালিকা পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার শাহীদ ইশরাক ভালো বলতে পারবেন।’

সহকারী কমিশনার শাহীদ ইশরাক বলেন, ‘নাগরিক কমিটি, রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজ থেকে কিছু সংগঠনের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। তাদের অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধনও হয়েছে। তাদের একটি তালিকা আয়োজকদের দেওয়া হয়েছে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা উদীচী কীভাবে ফ্যাসিস্টের দোসর হলো এমন প্রশ্নের জবাবে শাহীদ ইশরাক বলেন, ‘আসলে বিষয়টা বিব্রতকর। আমরা নানামুখী ঝামেলায় আছি।’

তবে বর্ষবরণের অপর অনুষ্ঠান সিআরবির শিরীষতলার আয়োজকদের কাছে কোনও সংগঠনের তালিকা পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে। এই সংগঠনগুলোর অনেকে ওখানেও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেবে।