বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রবাসীর মৃত্যু: ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক প্রবাসীর মৃত্যুর ঘটনার জের ধরে ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে এসব বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে মো. সাইজুদ্দিন দেওয়ান (৪৫) নামের স্পেনপ্রবাসী এক ব্যক্তি নিহত হন। তিনি উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জি এম শামীম গাজীর অনুসারী ছিলেন। সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন। ওই দিন বিকালে উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের মধ্যচরবংশী বেড়িবাঁধ, বাবুরহাট ও খাসেরহাট বাজারে দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহত সাইজুদ্দিনের লাশ ময়নাতদন্তের পর মঙ্গলবার বিকালে চরবংশী গ্রামে আনা হয়েছে। তার বাড়ি উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চর ঘাসিয়া গ্রামে। ঈদ উদযাপন করতে স্পেন থেকে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। সাইজুদ্দিন বংশী বেড়িবাঁধ এলাকার সংঘর্ষে গুরুতর জখম হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবিরাজ ও উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব শামীম গাজী গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাইজুদ্দিন দেওয়ান নিহত হওয়ার পর এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা সকাল ১০টা থেকে জড়ো হয়ে এলাকায় বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে চরবংশী গ্রামের এবাদুল্লা গাজী, রুহুল আমিন, আরিফ হোসেন, ফারুক গাজী ও তারেক হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া চর কুঁচিয়া গ্রামের গণি খাঁ, মনু সর্দার, শরীফ সর্দার, আনোয়ার হোসেন, জালাল আহমেদসহ ১০ জনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

ফারুক গাজী জানান, ১০-১৫ জন যুবক এসে তার বাড়িতে অতর্কিত হামলা করেন। একপর্যায়ে তারা ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করেন ঘরে। এ সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর পরিবারের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।

চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ফারুক কবিরাজ বলেন, ‘শামীমের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব চলছে; কিন্তু সাইজুদ্দিন দেওয়ানকে আমাদের লোকজন কুপিয়ে খুন করেনি। সংঘর্ষে শামীমের লোকজনের কোপের আঘাতে তিনি নিহত হন। তা ছাড়া এখন ঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে লুটপাটের ঘটনা ঘটাচ্ছেন শামীমের লোকজন।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জি এম শামীম বলেন, ‘ফারুক কবিরাজের ভাই মেহেদী কবিরাজের নেতৃত্বে সাইজুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর থেকে আমরা শোকাহত। এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের সমর্থকদের কয়েকটি ঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নয়।’

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে ওই এলাকায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। নিহতের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি।’

লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার জামিলুল হক বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। মামলার পর ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’