মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আবদুল্লাহ আল নোমান

মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানকে। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাদ আসর চট্টগ্রামে রাউজান উপজেলার গহিরা হাই স্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আবদুল্লাহ আল নোমানের ব্যক্তিগত সহকারী নুরুল আজিম হিরু। 

তিনি বলেন, পারিবারিক কবরস্থানে আগে থেকে শায়িত আছেন তার বাবা মরহুম আহমেদ কবির চৌধুরী ও মা মরহুমা আনজুমান আরা বেগম। 

গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টায় রাজধানীর ধানমন্ডির বাসায় অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পর ইন্তেকাল করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। ঢাকায় তিন দফা জানাজা শেষে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে হেলিকপ্টারে মরদেহ চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আনা হয়। এরপর কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারের বাসভবন প্রাঙ্গণে নেতাকর্মী ও স্বজনদের দেখার জন্য মরদেহ রাখা হয়। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মরদেহ রাখা হয় চট্টগ্রাম বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবনের মাঠে। সেখানে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান।

বাদ জুমা চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ ময়দানে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি রাউজান গহিরায়। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে আমরা একজন অভিভাবককে হারিয়েছি। শুধু রাজনীতিবিদদের কাছে নয়, তার গ্রহণ যোগ্যতা ছিল সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে। জনগণের নেতা হিসেবে তিনি সর্বজন সমাদৃত ছিলেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, আবদুল্লাহ আল নোমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ২ জুলাই, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল নোমানের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন চট্টগ্রামে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ষাটের দশকের শুরুতে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে নোমান যোগ দেন ছাত্র ইউনিয়নে। মেননপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর চট্টগ্রামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

ছাত্রজীবন শেষ করে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর হাত ধরে যোগ দেন শ্রমিক রাজনীতিতে। পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৭০ সালে তাকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ শেষে আবারও ন্যাপের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠনের পর ১৯৮১ সালে যোগ দেন দলটিতে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটির প্রথমে তিনি সিনিয়র সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা সাংগঠনিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংগঠনিক কমিটির সভাপতিও হন। দীর্ঘ ১৫ বছর তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। এর আগে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম নোমান। দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতির নেতৃত্বও ছিল তার হাতে। মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার প্রায় সব জায়গায় ছিল তার নেতৃত্ব। এসব এলাকায় তার অনুসারীরাই নেতৃত্বের আসনে থাকতেন সব সময়। তাকে ছাড়া চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিও একসময় যেন অকল্পনীয় ছিল।

১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর লালদিঘি ময়দানে খালেদা জিয়াকে তিনিই প্রথম ‘দেশনেত্রী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।  

আবদুল্লাহ আল নোমান ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে তাকে সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মেয়াদে তিনি খাদ্যমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।