কক্সবাজারের টেকনাফের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে নাফনদ; যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে ভাগ করেছে। এই নদের বুকেই টেকনাফের শেষ সীমান্তে শাহপরীর দ্বীপে ৫৫০ মিটার লম্বা জেটি নির্মিত হয়েছিল ২০০৪ সালে। ২ কোটি ১০ লাখ টাকায় এটি নির্মাণের পর আর কোনও সংস্কার হয়নি। এতে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে জেটিটি। ধসে পড়েছে জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কার পাশাপাশি হুমকির মুখে দ্বীপবাসী।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে পর্যটকসহ জেলেদের নৌযান এবং মিয়ানমারের পশু করিডোর সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেটিটি নির্মাণ করছে। এ জেটিতে বিশ্রামাগার, শৌচাগার ও চারটি সিঁড়ি রয়েছে। এছাড়াও জেটি ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে জেটিটির পাশে রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিং স্পট। পরে জেটিটি ২০০৪ সালে কক্সবাজার জেলা পরিষদকে স্থানান্তরিত করলে, সেটি ২০০৬ উদ্বোধন করে উন্মুক্ত করা হয়।
এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজিবি সদস্য বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জেটিতে বড় ধরনের কোনও যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা সত্য জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা লোকজনকে বেশি ভিড় না করতে অনুরোধ করছি। জেটির অবস্থা খুব নাজুক, যেকোনও সময় ধসে পড়তে পারে।’
জসিম মাহমুদ নামে দ্বীপের বাসিন্দা বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপের জেটিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৬ সালে এটি উদ্বোধনের পর থেকে আর কখনও সংস্কার করতে দেখা যায়নি। ফলে জেটির রেলিং কনস্ট্রাকশন যা আছে সব ভেঙে যাচ্ছে। জেটির ভয়াবহ অবস্থা। নাফনদের বুকে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে পর্যটকরা বেড়াতে আসেন এখানে। এছাড়া এই জেটি দিয়ে সেন্টমার্টিনও চলাচল করে থাকেন অনেকে। তাই এটি খুব দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন। না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’
জানতে চাইলে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান, ‘শাহ পরীর দ্বীপ জেটিতে শত শত পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। ফলে জেটিতে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন পেশাজীবী শত পরিবারের। এই জেটি ধসে পড়লে কষ্টে পড়বে পুরো দ্বীপবাসী। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, দ্রুত এই জেটি সংস্কারের।’
জেটি সংস্কার হবে কবে?
নির্মাণের ২১ বছর হলেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া জেটিটির বড় ধরনের সংস্কার যখন জরুরি হয়ে পড়েছে, তখন এর দায়িত্ব নিচ্ছে না স্থানীয় প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও জেলা পরিষদ কার্যালয়। পরস্পরের ওপর দায় চাপিয়ে বড় ধরনের সংস্কারের বিষয়ে নীরব রয়েছে দুই সংস্থা।
তবে টেকনাফ উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা রবিউল হোসাইন বলেন, ‘২ কোটি ১০ লাখ টাকায় নির্মিত শাহপরীর দ্বীপের জেটিটি জেলা পরিষদকে ২০০৪ সালে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন থেকে জেটি সংস্কার ও দেখভালের দায়িত্ব তাদের (জেলা পরিষদের)।’
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ শাহপরীর দ্বীপ জেটির বিষয়ে জেলা পরিষদকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সংস্কারের কাজ করবে।’