ঘূর্ণিঝড় দানায় নোয়াখালী উপকূলে ‘রিমাল’ আতঙ্ক, থেমে থেমে বৃষ্টি

পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’য় পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে থেমে থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় মেঘনা নদীতে বেড়েছে জোয়ার। এতে আতঙ্কিত উপকূলের কয়েক লাখ মানুষ।

যদিও আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় দানা নোয়াখালী উপকূলে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবু অতীতের অভিজ্ঞতায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিচ্ছে এই জনপদের মানুষ।

জানা যায়, মাত্র পাঁচ মাস আগে চলতি বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমাল এ উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করে। রিমালসহ আগের একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলীয় এলাকার মানুষ। রিমাল আঘাতের পাঁচ মাস না যেতেই ফের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় দানা। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে।

উপকূলবাসীর আশঙ্কা, ঘূর্ণিঝড় দানা আঘাত হানলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে নদীর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভেঙে যেতে পারে দুর্বল বেড়িবাঁধ। এজন্য উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চিন্তিত নোয়াখালীর হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সোনাদিয়া, তমরদ্দি ও চরকিং ইউনিয়নে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।

হাতিয়ার চরকিং এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘যেকোনও দুর্যোগের খবরেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। নদীপাড়ে আমাদের বাড়ি। নদীভাঙনে আমরা এমনিতেই নিঃস্ব। তার ওপর বছরে দুই-চারবার ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের শেষ সম্বলটুকুও শেষ করে দেয়। আজ আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস জানার পরপরই আমাদের এলাকার স্থানীয়দের মাছে আতঙ্কের দেখা দিয়েছে। পাঁচ মাস আগে একবার ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।’

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সোহেল বলেন, ‘আজ সকাল থেকে আমাদের এখানে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। একটি ঘূর্ণিঝড় আসার খবর শুনলাম। এ নিয়ে স্থানীয়রা অনেক চিন্তিত। যদিও এখন পর্যন্ত বড় পরিসরে কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি।’

জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন-চার ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। নৌযানসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে পারে।’

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় দানা নিয়ে উপকূলীয় সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রাথমিকভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সংকেত ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে এটি পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া বিভাগ। এরপরই রাজ্যটিতে টানা চার দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং একদিনের জন্য রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবর জানিয়েছে।