‘এখন আর ঘুমাতে পারি না। সবাই বলতো আমার আর মুগ্ধর হাসি নাকি খুব সুন্দর। কিন্তু আমি এখন আর হাসতে পারি না। ১৮ জুলাইয়ের পর আমি এখন হাসতে ভুলে গেছি। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের করুণ মৃত্যু প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ এসব কথা বলেন।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার লাকসাম পৌর অডিটোরিয়ামে লাকসামের ঐতিহ্যবাহী সুরক্ষা সিটির আয়োজনে সুরক্ষা পরিবার ও আপনজনদের স্বীকৃতি এবং ভালোবাসার অনুষ্ঠানে এসব কথা বলে কেঁদে ফেলেন তিনি।
এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘যে হারিয়েছে সে-ই বুঝে হারানোর যন্ত্রণা কত নির্মম ও কষ্টের! তবে আমরা সকল কষ্ট ভুলে যাবো, যদি একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারি। আমার ভাই-বোনদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য ছিল। সেটি হলো, শোষণ এবং অন্যায় অত্যাচার ও দুর্নীতিমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়া। তাদের সেই স্বপ্নপূরণে আমরা এখন কাজ করছি। আন্দোলনে নিহত এবং আহতরা আমাদের একটি স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, তাদের রক্তে অর্জিত সেই স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। সেজন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে বেশি করে সহযোগিতা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের আমরা খোঁজখবর রাখছি। তাদের সহযোগিতা করার জন্য “জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামে একটি সংগঠন সৃষ্টি করেছি। আপনারা সকলে মিলে সহযোগিতা করলে এটি আরও ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে, ইনশাআল্লাহ।’ এ সময় তিনি যাত্রাবাড়িতে নিহত কুমিল্লার লাকসাম পৌর এলাকার জিসানের বাবা বাবুল মিয়া, আহত আবুল কাসেম এবং কুমিল্লায় আহত শুভর সঙ্গে কথা বলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সুরক্ষা সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মু. আসাদুজ্জামান ভুট্টো। অন্যান্যদের মধ্যে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী, ভাইয়া গ্রুপের পরিচালক সাবেক পৌর মেয়র মো. মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, জামায়াতে ইসলামী লাকসাম পৌরসভার আমীর মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী, সেক্রেটারি মু. শহীদ উল্লাহ, বিশিষ্ট আইনজীবী মু. বদিউল আলম সুজন, নবাব ফয়েজুন্নেছা পরিবারের সদস্য আয়াজ আলী চৌধুরী, লাকসাম থানার ওসি মো. সাহাবুদ্দিন খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার যাত্রাবাড়িতে নিহত কুমিল্লার লাকসাম পৌর এলাকার জিসানসহ সকল নিহতের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনকল্যাণে অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুরক্ষা পরিবারের আপনজনদের সম্মাননা ও স্বীকৃতি ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।