নোয়াখালীতে দুই দফায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হামলা, লাইনম্যানদের মারধর

নোয়াখালীতে বিদ্যুতের দাবিতে পল্লীবিদ্যুতের সাব-স্টেশনে দুই দফায় হামলা চালিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় দুজন লাইনম্যানকে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ও রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার দাদপুরে ওই ঘটনা ঘটে। এই পরিস্থিতিতে গতকাল রাত থেকে ওই সাব-স্টেশনের আওতাধীন চারটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ইউনিয়নগুলোর প্রায় ৩০ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন আছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দাদপুর সাব-স্টেশনের অধীন চারটি ইউনিয়ন-১৯ নম্বর পূর্ব চর মটুয়া, ১ নম্বর চর মটুয়া, দাদপুর ও নোয়ান্নই ইউনিয়ন এলাকায় তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। গত সোমবার স্থানীয় একদল বিদ্যুৎ গ্রাহক সাব-স্টেশনে গিয়ে হামলার চেষ্টা চালালে পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের শান্ত করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কয়েকশ ক্ষুব্ধ গ্রাহক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালান। এ সময় কেন্দ্র লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। কেন্দ্রে থাকা দুই লাইনম্যানকে নাজেহাল করে করেন। পরে দুই লাইনম্যান কেন্দ্রে ছেড়ে চলে যান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পরবর্তী সময়ে দুই লাইনম্যান পুনরায় কেন্দ্রে এসে কেন্দ্রের আওতাধীন কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেন। এরপর রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আবারও কয়েকশ লোক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে কেন্দ্রে দায়িত্বরত দুই লাইনম্যান সুজিত কুমার ও মো. গিয়াস উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। পরে একই এলাকার কিছু লোকের সহায়তায় তারা এলাকা ত্যাগ করেন এবং নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, ‌গতকাল রাতে একদল লোক এসে চালু লাইন বন্ধ করতে দুই লাইনম্যানকে বাধ্য করেন। তখন তারা দুই লাইনম্যানকে বলে, ‘বিদ্যুৎ লাগবে না। লাইন বন্ধ করুন।’ লাইন বন্ধ করার পর ওই দুই কর্মচারীকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। এতে তারা দুজনই মারাত্মক আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই সাব-স্টেশনটি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রটি চালু করার জন্য লাইনম্যানদের কেউ এখন সেখানে যেতে রাজি হচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দাদপুরে পল্লীবিদ্যুতের সাব-স্টেশনে হামলা এবং কর্মীদের মারধরের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির দাবি অনুযায়ী সেখানে নিরাপত্তা জোরদার এবং প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’

সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মীর জাহিদুল হক বলেন, ‘অনেক রাতে ঘটনা হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। তবে ঘটনার বিষয়ে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’