ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০০ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার ইকবালের আদালত এই মামলা দায়ের করা হয়। ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অন্তত ছয়টি নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ এনে এই মামলা দায়ের করেন প্রথম আলোর তৎকালীন রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি মো. ইব্রাহিম খলিল।
মামলায় ছয়টি ঘটনায় অন্তত ১০০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তার (হাছান মাহমুদের) ভাই খালেদ মাহমুদ ও এরশাদ মাহমুদ, সাবেক রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আজম ছিদ্দিকী, সাবেক রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রকৌশলী হাসান আলী, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মঞ্জুর মোর্শেদ, দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও বার্তা সম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহসিসহ ১০০ জন। এছাড়া আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ প্রদান করেন। মামলার বাদিও পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জমির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার বাদি ইব্রাহিম খলিল পেশায় একজন সাংবাদিক। ২০০০ সাল থেকে রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম আলো পত্রিকায় তার কর্মজীবন শুরু হয়।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ২০১০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পূর্ব সরফভাটায় সরকারি পাহাড়ে গণমানুষের কবরস্থান কেটে প্রবাসীর বসতঘরের জন্য পুকুর ভরাট করছিল। খবর পেয়ে ২০ নভেম্বর সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে গেলে সরফভাটার অভিযুক্তরা হত্যার উদ্দেশ্যে সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল ও তার সাথে থাকা ক্যামেরা ম্যানকে আটক করে বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও তৎকালীন ওসি মঞ্জুর মোর্শেদ মামলা না নিয়ে উল্টো সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়েরের জন্য অভিযুক্ত তৎকালীন বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হুকুম আছে বলে হুমকি দেন।
এরপর ২০১১ সালের ২৯ মে উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলি ইউনিয়নের বনগ্রাম মাহবুবুল আলম চাষী ফার্ম সংলগ্ন এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের কাজে গেলে হত্যার উদ্দেশ্যে ইব্রাহিম খলিলসহ তিন সাংবাদিকের উপর হামলা চালায় আবদুস সালাম নামে এক ব্যক্তির স্ত্রী ও তার সহপাঠীরা। এ সময় দুর্বৃত্তরা ইব্রাহিম খলিলের হাতে থাকা মোবাইল ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। পরে অভিযুক্ত সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী মোবাইল নিয়ে আসলেও ক্যামেরা ফেরত দেয়নি। এ নিয়ে মামলা করতে চাইলে মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো চার দিন পর ইব্রাহিম খলিলসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। প্রায় ৬ বছর পর ওই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত খারিজ করে দেন।
এরপর ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মসজিদ মার্কেটের আওতায় সম্পূর্ণ বৈধভাবে নির্মিত দোকান ভাঙচুর করে তৎকালীন ইউএনও তানভীর আজম ছিদ্দিকী, উপজেলা প্রকৌশলী হাসান আলীসহ অভিযুক্তরা। তানভীর আজম ছিদ্দিকী বর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদে কর্মরত আছেন।