গোমতী নদীর বাঁধ কেউ ভাঙেনি, পানির স্রোতে ভেঙেছে: পাউবো

কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বাঁধটি ভেঙে গিয়েছিল। প্লাবিত গ্রামগুলো হলো বুড়বুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর।

এরই মধ্যে বাঁধ ভেঙে দেওয়ার গুজব ছড়িয়েছে কুমিল্লায়। ফেসবুকে এমন গুজব ছড়ানো হয়েছে। এই গুজবের প্রতিবাদ জানিয়ে জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশরী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধটি পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে যায়। এ ঘটনার পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ওই স্থানে বাঁধ ভেঙে দেওয়া হয়েছে মর্মে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এখন পর্যন্ত এই সংবাদের কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি। এটি সম্পূর্ণ গুজব। কেউ বাঁধ ভেঙে দেয়নি। বরং পানির স্রোতে ভেঙে গেছে।

নির্বাহী প্রকৌশরী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে বাঁধের ওই স্থানের নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাত পৌনে ১২টার দিকে পানির প্রবল স্রোতে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।’

পাউবো কর্মকর্তারা বলেছেন, গত দুই দিনে পানি বাড়ার হিসাব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। গতকাল বিকালে পানি বিপদসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছিল। ১৯৯৭ সালে নদীটিতে বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ২০ আগস্ট থেকে ভারতের উজান হতে আসা পানি এবং কুমিল্লা জেলায় হওয়া প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে গোমতী নদীর পানির উচ্চতা বাড়তে থাকে। ২১ আগস্ট থেকে গোমতীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। টানা তিন দিন ধরে চলমান বৃষ্টিপাত, পানির প্রবল স্রোতের কারণে গোমতীর উভয় বাঁধ গত ৪৮ ঘণ্টার অধিক সময় ধরে পানিকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় রেখে কুমিল্লার সাত উপজেলাকে রক্ষার চেষ্টা করে আসছিল পাউবো। এই নদীতে দীর্ঘ সময় ধরে পানিকে বিপদসীমার সর্বোচ্চ স্থানে রাখার ঘটনা নজিরবিহীন। দীর্ঘসময় ধরে পানি ধরে রাখায় মাটি নরম হয়ে গোমতীর বাঁধের বিভিন্ন অংশ দুর্বল হয়ে যায়। এতে ফাটল দেখা দেয়। যা মেরামত করার জন্য এলাকবাসী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কাজ করেছে পাউবো, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কিন্তু প্রবল স্রোতের কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় বাঁধটি ভেঙে গেছে। কাজেই ভেঙে ফেলার গুজব ছড়ানো খুবই দুঃখজনক।