মোবাইল চুরির অভিযোগে গৃহবধূকে পিটিয়ে শরীরে গরম পানি ঢাললো দুই মেম্বার

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় এক গৃহবধূকে পিটিয়ে এবং গরম পানি ঢেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুই মেম্বারের বিরুদ্ধে। তারা হলেন বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বর্তমান এবং সাবেক সদস্য। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মহেশপুর এলাকায় গ্রাম পুলিশের সদস্য স্বামী মহরম আলীকে নিয়ে বাস করেন ওই গৃহবধূ। সম্প্রতি ওই গৃহবধূর ওপর নজর পড়ে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার ইসহাক মিয়া ও সাবেক মেম্বার আবুল হোসেনের। ওই গৃহবধূ তাদের কুপ্রস্তাব প্রত্যাখান করায় দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় তারা। পরে গত ৮ জুলাই দুপুরে ইসহাক মিয়া ও আবুল হোসেন গৃহবধূকে স্থানীয় হুমায়ুন মিয়ার বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। এ সময় তাকে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে টেনেহিঁচড়ে মাটিতে ফেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে বেত্রাঘাত করে নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে ইসহাক মেম্বার এবং আবুল হোসেন তাকে মাটিতে ফেলে যৌন হয়রানির পাশাপাশি শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয়।

এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ছড়িয়ে পড়লে নড়েচড়ে বসেন জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। পরে শনিবার (১৩ জুলাই) রাতে অভিযান চালিয়ে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার ইসহাক মিয়া এবং একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন রবিবার (১৪ জুলাই) আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে নির্যাতনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামীসহ স্থানীয় এ নিয়ে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি। এলাকার দুই বাসিন্দা লোকমান হোসেন ও আনিস মিয়া ঘটনাটিকে নিন্দনীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন।

অপরদিকে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী মহরম আলী বলেন, ‘স্ত্রীকে নির্যাতন করেছে, এটা বলতেও ভয় পাচ্ছি। এ নিয়ে মুখ খুললে এলাকায় থাকতে পারবো কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তবে ঘটনা যাই হোক আমি আমার স্ত্রীর নির্যাতনের বিচার চাই।’

নির্যাতনের ঘটনায় ওই গৃহবধূ শনিবার রাতে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বর্তমান মেম্বার ইসহাক মিয়াকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে বিজয়নগর থানায় মামলা করেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মো. আবুল হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা মো. হুমায়ুন মিয়া ও নির্যাতনের সহযোগী হোসনে আরা।

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান জামিল খান জানান, এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ইসহাক মিয়া এবং আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার দুজন নির্যাতনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।