মিতু হত্যার ৮ বছর: দায়ীদের সাজা দেখার আকুতি মা-বাবার

আজ বুধবার (৫ জুন) চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার আট বছর পূর্ণ হলো। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর জিইসি মোড়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মিতু। এ মামলায় আসামি হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন বাবুল আক্তারসহ পাঁচ আসামি। এ মামলায় ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

মেয়ে মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পিতা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। যারা আমার মেয়েকে এমন নৃশংসভাবে, নির্দয়ভাবে খুন করেছে আমি তাদের শাস্তি দেখতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে এসেছি। শুধু মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের পরকীয়া বিষয়টি জেনে যাওয়ার কারণে আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এ মামলায় ৫০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আশা করছি আমরা মেয়ে হত্যায় ন্যায়বিচার পাব।’

মিতুর মা শাহেদা মোশাররফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার দুই মেয়ের মধ্যে মিতু বড়। তার সঙ্গে কেন এমন নৃশংসতা করা হয়েছিল? আমার মেয়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিচার চাই।’ 

বাবুল আক্তার ও মিতু

চট্টগ্রামের তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান আছে। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. নেছার আহম্মেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সর্বশেষ গত ১৫ মে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। ওইদিন সাবেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফি উদ্দিন স্যার আদালতে সাক্ষ্য দেন। তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আসামি এহতেশামুল হক ভোলা এবং তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন।’

নেছার আহম্মেদ বলেন, ‘এ মামলায় মোট ৯৭ জন সাক্ষী রয়েছেন। ইতোমধ্যে ৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। সিরিয়ালিভাবে ৬০ পর্যন্ত সাক্ষ্য হয়েছে। মাঝখানে কয়েকজন সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হননি। আগামী ১ জুলাই এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য তারিখ রয়েছে।’ 

এর আগে ২০২৩ সালের ৯ এপ্রিল মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য নেওযার মধ্যে দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় মিতুর মা শাহেদা মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

এদিকে, বাবুল আক্তারের আইনজীবী কপিল উদ্দিন বর্তমানে হজ পালনের জন্য মক্কায় রয়েছেন। তার অপর আইনজীবী মো. মামুনুল হক বলেন, ‘এ মামলায় ৫০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, তার মধ্যে বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বক্তব্যে মিল নেই।’

২০২৩ সালের ৯ এপ্রিল মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য নেওয়ার মধ্যে দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট অব্দুর রশিদ বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলাটি চাঞ্চল্যকর এবং স্পর্শকাতর। সাক্ষীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের নির্দেশেই মিতুকে খুন করা হয়েছে।’

মিতুকে হত্যার পরদিন ২০১৬ সালের ৬ জুন বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিন জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। স্ত্রী হত্যার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন বাবুল। তিনি ঢাকার কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে স্ত্রী খুনের এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

বাবুল আক্তারের করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে এ মামলাটি সিএমপির ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশের তিন বছর তদন্ত শেষে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে এ মামলার তদন্তভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

২০২১ সালের মে মাসে পিবিআই জানায়, মিতুকে হত্যা করা হয়েছিল স্বামী বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায়। এজন্য খুনিদের লোক মারফত তিন লাখ টাকা দিয়েছিল বাবুল আক্তার। ওই বছরের ১২ মে বাবুল আক্তারের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। ওইদিন বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বাবুলসহ আট জনকে আসামি করা হয়।

২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মিতু হত্যা মামলায় আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্টার অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। এতে বাবুল আক্তারসহ সাত জনকে আসামি করা হয়। বাকি ছয় আসামি হলো—কামরুল ইসলাম মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা ওরফে হানিফুল হক, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম কালু ও মো. শাহজাহান মিয়া।

সাত আসামির মধ্যে বর্তমানে পাঁচ জন কারাগারে আছেন। কামরুল ইসলাম মুসাকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। অপর আসামি এহতেশামুল হক ভোলা জামিনে আছেন। গত বছরের ১০ অক্টোবর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।