চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে কবরে দাফনের সময় কান্না করে উঠেছে একটি নবজাতক শিশু। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতিতে নবজাতক শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এ ঘটনা বিচার দাবি করেন তারা। অন্যদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, শিশুটিকে না বলেই হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেছেন পরিবারের লোকজন।
শনিবার (১ জুন) বিকালে মীরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মীর হোসেনের পুত্র মো. ইউনুস আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের পেটে ব্যথা অনুভব ও রক্তক্ষরণ হলে তিনি উপজেলার মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন দায়িত্বরত গাইনি চিকিৎসক শারমীন আয়েশা আল্ট্রা করার পর জানান বাচ্চা মারা গেছেন। পরবর্তী সময়ে রাতে চিকিৎসক ডেলিভারির প্রস্তুতি নেন এবং রাত পৌনে ৯টায় নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী, একটি কার্টনে করে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজা শেষে কবরস্থ করার জন্য কার্টন খুললে নবজাতক শিশুটি কান্না শুরু করেন।
মো. ইউনুস আলী অভিযোগ করেন, সকালেও বাচ্চা সুস্থ আছে বলে জানিয়েছিলেন ডা. শারমীন আয়েশা। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে বিকেলে পুনরায় চেকআপ করে বলেন বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্টনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হওয়ার পর রাত ৯টার দিকে কার্টুনে করে বাচ্চাকে কাফন দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে। যেহেতু ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী বাচ্চা পরিবার ও বাড়ির সবাই কার্টন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেওয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালে ফোন করলে তারা বলেন, বাচ্চা পাটিতে রাখেন, দেখবেন বাচ্চা মারা যাবে! তখন আমি তাদের বকাঝকা করে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে উপস্থিত লোকজন আমার বাচ্চা জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চমেক হাসপাতালের ৬ তলায় ৩২ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তারা আমার বাচ্চাকে মৃত বলে ৫ মাস ১৯ দিন বয়সে ডেলিভারি করে। বাচ্চা এখনও অপরিপক্ব। তারা কি ডাক্তার? নাকি অন্যকিছু। জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কার্টুনে করে নিয়ে যেতে বলে। বেঁচে থাকলেও আমার বাচ্চার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। এ জন্য ডাক্তার শারমীন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল দায়ী। আমি তাদের শাস্তি দাবি করছি।
উপজেলার ৯নং মীরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ফরহাদ আনোয়ার জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে লোকজনের ভিড় দেখে ভেতরে যাই। এরপর দেখি ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক জীবিত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে মৃত বললো, আমি বুঝতেছি না।
এ বিষয়ে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে নরমাল ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর ১ মিনিট বাচ্চার নড়াচড়া ছিল। ১৫ মিনিট ওই চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা তাকে দেখতে আসে। এক পর্যায়ে কখন হাসপাতাল থেকে নবজাতক বাচ্চাটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় আমরা বলতে পারি না।
শিশুটিকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, নবজাতক বাচ্চাটি মারা গেছে, এমনটা স্বজনদের বলা হয়নি। তাঁরা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও জানি না। যদি মারা যেতো তাহলে আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেবো, রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করবো। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। নবজাতকটিকে রাতে পুনরায় হাসপাতালে আনলে আমরা তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি।
এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এই ধরনের ঘটনা আমি অবগত নই। এখন শুনলাম। সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে বাঁচার কথা না। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।