মীরসরাইয়ে গাছ পড়ে বসতবাড়ি বিধ্বস্ত, অন্ধকারে দেড় লাখ মানুষ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে লক্ষাধিক মানুষ অন্ধকারে রয়েছে। এতে দুর্বিষহ জীবন পার করছে তারা। এ ছাড়া উপজেলার অনেক জায়গা গাছ পড়ে বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে ঘেরের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ। গ্রীষ্মকালীন আবাদি সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সোমবার (২৭ মে) ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস শুরু হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এতে দুর্বিষহ জীবন পার করছে এখানকার প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ।

জানা গেছে, রবিবার মধ্যরাত থেকে রিমালের প্রভাবে বৃষ্টি ও দমকা বাতাস শুরু হয়েছে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে সোমবার ভোর থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আদৌ বিদ্যুৎ সরবরাহ কখন স্বাভাবিক হবে, তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, থেমে থেমে আসা দমকা বাতাসের সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের সমস্যা হচ্ছে। শ্রমিকদের দেখা গেছে বৃষ্টির মধ্যেও কাজের খোঁজে বেরিয়েছেন তারা। এ ছাড়া ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চাকরিজীবীদের অফিসে যেতে দেখা গেছে।

উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকায় গাছ পড়ে মিরসরাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম মাঈন উদ্দিনের বসতঘর ভেঙে গেছে। উপজেলার ফেনাফুনি এলাকায় গাছ পড়ে তামরিজ একাডেমী নামে একটি বিদ্যালয় ভেঙ্গে গেছে।

উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মাছচাষি নিজাম উদ্দিন জমিদার বলেন, সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ফেনী নদীর জোয়ারের পানিতে আমাদের প্রকল্পের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। আমাদের প্রকল্প ছাড়াও আরও অনেকের প্রকল্প থেকে মাছ ভেসে গেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরও লোকসান গুনতে হবে।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর মীরসরাই জোনাল অফিসের এজিএম প্রকৌশলী উদয় দাশ গুপ্ত বলেন, মীরসরাই উপজেলায় সোমবার ভোর থেকে ঝোড়ো বাতাসের কারণে খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ অন্ধকারে রয়েছে। তবে কী পরিমাণ খুঁটি ভেঙেছে, তীব্র বাতাসের কারণে এখনও তা সঠিক নির্ণয় সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ইতোমধ্যে বোরো ধান কাটা শেষ। গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করা যায়নি।

উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে কিছু মাছের প্রকল্পের মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঘটনাস্থলে যাবো।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন জানান, রিমেলের প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কিছু জায়গায় গাছপালা পড়ে বসতঘর ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে ও যেকোনও দুর্ঘটনায় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।