সোমবার দেশে পৌঁছাবে এমভি আবদুল্লাহ

গত মার্চের ১২ তারিখে অপহরণের কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহসহ ২৩ নাবিক। দীর্ঘ এক মাস পর মুক্তিপণের বিনিময়ে জাহাজটি উদ্ধার করা হয়। এরপর দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় জাহাজটি। সেখানে পণ্য খালাসের পর গত ৩০ এপ্রিল জাহাজটি দেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সোমবার (১৩ মে) দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে এমভি আবদুল্লাহর। শনিবার (১১ মে) সকালে জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায় ছিল বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন এমভি আবদুল্লাহর একাধিক নাবিক।

জাহাজটি প্রথমে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ভিড়বে। সেখানে দুদিন পণ্য খালাসের পর চট্টগ্রামের বহির্নোঙরে ভেড়ার কথা রয়েছে। বাকি পণ্য সেখানে খালাস করা হবে।

এ প্রসঙ্গে কেএসআরএম এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমবার রাতে এমভি আবদুল্লাহ কক্সবাজারের কুতুবদিয়া পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপর জাহাজের নাবিকদের তীরে নিয়ে আসা হবে। এখনও বাকি প্রোগ্রাম ঠিক করা হয়নি।’

এদিকে, শনিবার জাহাজে থাকা একাধিক নাবিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের (বে অব বেঙ্গল) ভারতের জলসীমায় রয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করছি সোমবার দেশে পৌঁছাতে পারবো।’

এর আগে জাহাজটির চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আল্লাহর রহমতে অবশেষে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেছি এমভি আবদুল্লাহসহ আমরা ২৩ নাবিক। সব ঠিক থাকলে ইনশাআল্লাহ আগামী ১৩-১৪ মে চট্টগ্রাম পৌঁছাবো।’

কেএসআরএম’র মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ নাবিক সুস্থ আছেন। গত ৩০ এপ্রিল ভোররাত ৪টার দিকে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনা পাথর নিয়ে দেশের পথে রওনা দেয়। জাহাজটি আগামী ১৩ মে চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা রয়েছে। এরপর নাবিকদের তীরে নিয়ে আসা হবে। বর্তমানে জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় অবস্থান করছে।’

অপহরণের দীর্ঘ এক মাস পর গত ১৩ এপ্রিল সোমালিয়ার সময় রাত ১২টা এবং বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় মুক্তি পায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক। এর আগে জলদস্যুদের মুক্তিপণের টাকা পৌঁছানো হয় একটি বিশেষ এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে। এই এয়ারক্রাফট থেকে দস্যুদের নির্ধারিত স্থানে তিনটি ব্যাগভর্তি ডলার পৌঁছানো হয়।

মুক্তির পর জাহাজটি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ২১ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই আল হারমিয়া বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে জাহাজটি। জাহাজটিতে থাকা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা সেখানে খালাস করা হয়। পরবর্তীতে আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনা পাথর লোড করা হয়। এসব পণ্য নিয়ে দেশের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ।  

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এসআর শিপিং সূত্র জানিয়েছে, এমভি আবদুল্লাহ গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হারমিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। প্রায় এক মাস পর মুক্তিপণের বিনিময়ে জাহাজসহ ২৩ নাবিক মুক্তি পায়।

এসআর শিপিংয়ের অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত করা হয় এমভি আবদুল্লাহকে। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর জাহাজের নামও পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম হয় এমভি আবদুল্লাহ।