কুসিক উপনির্বাচন

ভোটার উপস্থিতি কম, শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ তিন প্রার্থীর

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে। ভোট গ্রহণ শুরু হলেও কেন্দ্রে তেমন ভোটার নেই। ভোটের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন তিন মেয়র প্রার্থী।

ভোটের শুরুতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে মোড়ে মোড়ে এমপি বাহারের মেয়ে বাস প্রতীকের তাহসিন বাহার সূচনার কর্মীদের সরব অবস্থান। নগরীর কাপ্তান বাজার ও ইসলামিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগ কর্মীদের দেখা যায়। তারা এমপি বাহারের অনুসারী। যাদের প্রত্যেকের গলায় আছে বাস প্রতীকের ব্যাজ। বাগিচাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র সংলগ্ন ভূতের গলি, অশোকতলা এবং কুমিল্লা হাইস্কুল কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।

এদিন সকাল ৮টায় রিয়াজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ গোটা ৩০ পুলিশ এবং আনসার সদস্য কেন্দ্র পাহারা দিচ্ছেন। সকাল ৮টার একটু আগে কেন্দ্রের সামনে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ কারণে বাড়তি পুলিশ সদস্য সেখানে হাজির হন। সকাল ৮টায় পাঁচ জন ভোটার কেন্দ্রে আসেন। সকাল ৮টার একটু পর বাস প্রতীকের ব্যাজ পরে কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে একদল যুবক। তারা নিজেদের ভোটার বলে দাবি করেন। কেন্দ্রের বাইরে চৌধুরীপাড়ার মোড়ে মোড়ে ব্লক করে রাখতে দেখা যায় স্থানীয় ছাত্রলীগের কর্মীদের।

টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আমার ভোটার এবং এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘৩, ৫ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আমার ভোটার-এজেন্ট সবাইকে বের করে দিচ্ছে বাস প্রতীকের লোকজন।’

হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া কলিজিয়েট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হতেই ফলাফল শিটে স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে।’

ভোটকেন্দ্রের বাইরের চিত্র

রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি কেন্দ্রে অভিযোগ পেয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। মোড়ে মোড়ে জটলা ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

কুমিল্লার আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার ২৭টি ওয়ার্ড ও ১০৫টি কেন্দ্র নিয়ে এই সিটি করপোরেশন। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ প্রার্থী। ঘড়ি প্রতীকে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, ঘোড়া প্রতীকে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার, বাস প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার ও হাতি প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে দুই লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন ভোটার রয়েছে। পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৮ হাজার ২৮২ জন, নারী ভোটার এক লাখ ২৪ হাজার ২৭৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুই জন। ভোটকক্ষের সংখ্যা ৬৪০টি। প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ১০৫ জন, সহকারী প্রিজাইডিং ৬৪০ জন, পোলিং এজেন্ট এক হাজার ২৮০ জন। প্রতি তিন ওয়ার্ডে একজন করে নয় জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আচরণবিধি প্রতিপালনে সব ওয়ার্ডে একজন করে ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। ১০৫ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১২ প্লাটুনে ৪৫০ জন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। র‍্যাব ২৭টিমে ৯৩৯ জন, পুলিশের ২৭টি মোবাইল টিমে ১৩৩৯ জন ও নয়টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে আছেন। প্রতি কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক পাঁচ জন পুলিশ সদস্য আছেন। এ ছাড়াও দুই থানার দুটি টিম রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে কাজ করছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের কুসিকের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট নেওয়া হবে।