ময়নামতি জাদুঘরে অযত্নে নষ্ট হচ্ছে ফসিল ট্রি

ময়নামতি জাদুঘর। এই পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ করলেই ফটকের ডান পাশে দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে গাছের কয়েকটি টুকরো। খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা এসব গাছের টুকরো দেখতে ভিড় জমান অনেকে। টুকরো গুলির সামনে লেখা আছে গাছের জীবাশ্ম বা ফসিল ট্রি।

মাটিতে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা এসব গাছের টুকরো সাধারণ কোনও গাছের টুকরো নয়। বলছি, ময়নামতি জাদুঘরের সামনে পড়ে থাকা ১০ হাজার বছর আগের উদ্ভিদ জীবাশ্ম বা ফসিল ট্রি’র কথা। সরেজমিনে ময়নামতি জাদুঘর এলাকা পরিদর্শন শেষে এমন তথ্য জানা গেছে।

ইতিহাস গবেষকরা বলছেন, খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা কোনও ঐতিহাসিক নিদর্শনই ভালো থাকে না। শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে এসব বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহাসিক নিদর্শন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে করে এ অঞ্চলের মানুষ এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হারাবে।

প্লাইস্টোসিন যুগের লালমাই পাহাড় থেকে কিছু উদ্ভিদের জীবাশ্ম উদ্ধার করা হয়

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়নামতি জাদুঘর। তখন বা তার কিছু সময় পর পার্শ্ববর্তী প্রায় পঁচিশ লক্ষ বছর আগের প্লাইস্টোসিন যুগের লালমাই পাহাড় থেকে কিছু উদ্ভিদের জীবাশ্ম উদ্ধার করা হয়। সেগুলো তৎকালীন ঐতিহাসিকরা এনে তা কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য রাখেন। একপর্যায়ে জাদুঘরটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বছরের পর বছর এসব জীবাশ্ম খোলা আকাশের নিচেই পড়ে আছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জীবাশ্ম ফাটল ধরে নষ্ট হওয়ার পথে।

চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে আসা পর্যটক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার জন্ম কুমিল্লায়। চট্টগ্রাম থাকলেও কুমিল্লায় ঘুরতে আসি। জাদুঘরে দীর্ঘদিন আমার যাতায়াত। সব সময় এই জীবাশ্মগুলোকে পড়ে থাকতে দেখি। এটা খুবই দুঃখজনক। এগুলোর সংরক্ষণ করলে পর্যটকরা আরও বেশি আকৃষ্ট হতো। কারণ, বাইরে থাকতে থাকতে এগুলো নষ্ট হয়ে রং ও সাইজ দুটিই বদলে যাচ্ছে।’

ইতোমধ্যে কয়েকটি জীবাশ্ম ফাটল ধরে নষ্ট হওয়ার পথে

কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন এগুলো দেখে আসছি। এসব ঐতিহাসিক নিদর্শন নষ্ট হওয়ার আগেই দ্রুত সংরক্ষণের অনুরোধ জানাই। আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইতিহাস থেকে বঞ্চিত না হোক।’

কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টডিয়ান শাহীন আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এই জীবাশ্মগুলোর বিষয়ে আলোচনা করছি। আশা করি, শিগগিরই এগুলো সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারবো।’

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। কিন্তু এগুলো অনেক বড়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা একটু কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি।’