পিটার হাসকে হুমকি দেওয়া সেই চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে মারধরের হুমকি দেওয়া চট্টগ্রামে বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নুরীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা) চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক গত ২৮ ডিসেম্বর পৃথক মামলা দুটি দায়ের করেন। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় রবিবার (৩১ ডিসেম্বর)।

এর মধ্যে একটি মামলায় বাঁশখালী উপজেলার ১০ নম্বর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীকে আসামি করা হয়। অপর মামলাটিতে তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নুরীকে প্রধান করে মুজিবুল হক চৌধুরীকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়।

মুজিবুল হক চৌধুরীকে একমাত্র আসামি করে দায়ের করা মামলাটিতে জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ১৪ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, মুজিবুল হক চৌধুরী ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দুদক কর্মকর্তাদের কাছে সম্পদবিবরণী দাখিল করেন। এতে ৬৭ লাখ ১৩ হাজার ৫৯১ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য ঘোষণা দেন। অপরদিকে ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার ২৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য ঘোষণা দেন। তবে অনুসন্ধানে তার নামে ৭০ লাখ ৩৫ হাজার ২৪১ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তবে দুদক কর্মকর্তাদের কাছে মুজিবুল হক চৌধুরী দাবি করেন, ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রবাসী হিসেবে সৌদি আরবে ছিলেন। কিন্তু তিনি বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানো সংক্রান্ত কোন রেকর্ডপত্র দাখিল করতে পারেননি।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে মুজিবুল হক চৌধুরীর নামে এক কোটি ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৭৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩২ টাকার। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ/গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ১৪ টাকার। তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে ৫৬ লাখ ৭১ হাজার ১৪ টাকার অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

অপর মামলায় চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী ছাড়াও তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নুরীকে প্রধান আসামি করা হয়। ওই মামলায় ৮৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বলা হয়, অসাধু উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তার স্ত্রী সাহেদা বেগম নুরীর নামে সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করেছেন।

সাহেদা বেগম নুরী গত ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দুদক কর্মকর্তাদের কাছে সম্পদবিবরণী দাখিল করেন। এতে ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ৬২২ টাকার স্থাবর এবং ৩৩ লাখ ৮৩ হাজার ১৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। তবে দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে ৮৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

সম্প্রতি মুজিবুল হক চৌধুরী তার এক বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সমালোচনা করে বলেন, ‘পিটার হাস বলেছেন, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পিটার হাস আমরা আপনাকে ভয় পাই না। আমরা মোটা চালের ভাত খাই। আপনি বিএনপির ভগবান। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ ইমান বিক্রি করি না। আপনাকে এমন মারা মারবো, বাঙালি কত দুষ্টু তখন বুঝতে পারবেন।’ তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।