হুইলচেয়ারে বসে ব্যাটে-বলে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শেখ রাসেল হুইলচেয়ার টি-টেন চার বিভাগীয় টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।

উদ্বোধনী খেলায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে ব্যাটে-বলে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন ঢাকা কিং বনাম রাজশাহী ডিলাক্সের খেলোয়াড়রা। এ সময় দর্শকরা মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে খেলোয়াড়দের উৎসাহ দেন।

সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, কারও এক হাত নেই তো কারও নেই পা। এমন সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তারকা খেলোয়াড়রা জড়ো হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে। তারা ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট এবং চট্টগ্রাম চার বিভাগ থেকে এসে হুইলচেয়ার টি-টেন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী খেলায় ঢাকা কিং বনাম রাজশাহী ডিলাক্সের খেলোয়াড়রা হুইলচেয়ারে বসে চার-ছক্কায় চমৎকার ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। এ সময় দর্শকরাও তাদের খেলা দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

রান নিচ্ছেন দুই ব্যাটার

খুরশিদা জাহান নামে এক দর্শক বলেন, ‘আমাদের কাছে খুব ভালো লাগছে যে যারা হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন তারাও ক্রিকেট খেলতে পারেন। সবার সহযোগিতা ও উৎসাহ পেলে তারা আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।’

শারমীন সুলতানা নামে আরেক দর্শক বলেন, ‘আমরা যাদের দেখছি তারা মনের দিক থেকে আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তারা হুইলচেয়ারে বসেও বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখছে। আমরা বিশ্বাস করি, তারা একদিন বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন চিত্রনায়িকা নিপুণ

ময়মনসিংহ থেকে আসা মজনু মিয়া নামে এক দর্শক বলেন, ‘আমি নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সেজন্য আজকে খেলা দেখে তাদেরকে উৎসাহ দিতে এসেছি। কারও এক হাত নেই তো কারোর নেই পা। কিন্তু তারা যে ক্রিকেট খেলতে পারে সেটি অসাধারণ ব্যাপার। আমরা সবাই তাদেরকে সব সময় উৎসাহিত করবো।’

অপরদিকে খেলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়সহ সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রে তাদের অনেকটাই সহায়ক হবে।

ফিল্ডিংয়ে সজাগ এক খেলোয়াড়

কাজী তারিকুল ইসলাম সুমন নামে এক খেলোয়াড় বলেন, ‘টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগছে। আগামীতে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে। সেসব ম্যাচের জন্য আজকের এই খেলা আমাদের অনেক কাজে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

ড্রিম ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ক্রিকেট টিমের কোচ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আজকে অনেক ভালো লাগছে। কারণ, আমরা চারটি বিভাগের দল বের করতে পেরেছি। এ ধরনের খেলা যত বেশি আয়োজন হবে তত বেশি ভালো মানের খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে। যেহেতু এখানে অনেকে অংশগ্রহণ করছে সেক্ষেত্রে আমরা ভালো মানের খেলোয়াড় বের করতে পারবো।’

ব্যাটে-বলে চলছে লড়াই

এদিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে এসে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন ড্রিম ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ক্রিকেট টিমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার। তিনি বলেন, ‘তারা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে। এর আগে কলকাতায় আমরা তাদের খেলা উপভোগ করেছি। আমি সকল খেলোয়াড়ের সাফল্য কামনা করি।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘তারা (প্রতিবন্ধী) যেন নিজেদের সমাজের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সেজন্য আমরা তাদের পাশে থাকবো। পাশাপাশি সরকারের যে প্রয়াস সেটি আমরা সকলে মিলে সফল করে তুলবো। আমাদের সন্তানরা যেন নিজেদের কখনোই অসহায় না ভাবে সেজন্য আমরা সব সময় তাদের পাশে থাকবো।’

প্রসঙ্গত, দুই দিনব্যাপী এই টুর্নামেন্টে মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এতে চার বিভাগের ৫০ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছেন।