রাঙামাটিতে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগী

রাঙামাটিতে ভয়াবহ আকারে বাড়ছে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা। এতে স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে আগের বছরের ছয় মাসের তুলনায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। ইতোমধ্যে শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু—দুটিই মশাবাহিত রোগ। ম্যালেরিয়া হয় অ্যানোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশার কামড়ে আর ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা। ইতোমধ্যে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গম উপজেলাগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বরকল ও বিলাইছড়িতে রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘ বর্ষা, মশারির কার্যকারিতা কমে যাওয়া ম্যালেরিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন জেলা সিভিল সার্জন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার আক্রান্তের হার দ্রুত বাড়ছে। ২০১৪ সালে ১৭ হাজার ৪৫, ২০১৮ সালে দুই হাজার ৯৯৩, ২০১৯ সালে ছয় হাজার তিন, ২০২০ সালে এক হাজার ৩৭৭, ২০২১ সালে এক হাজার ৬০০, ২০২২ সালে এক হাজার ২১২ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। পাশাপাশি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এক হাজার ৫৩২ জন আক্রান্ত হন। এর মধ্যে শুধু জুলাই মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৪৭৫ জন আক্রান্ত হন। সবমিলিয়ে চলতি বছর দুই হাজার সাত জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী জুরাছড়ির ৯২২ জন। এরপর বরকলে ৪৪৩, বিলাইছড়িতে ৪৪৩ ও বাঘাইছড়িতে ৩২৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১৭০, ফেব্রুয়ারিতে ১০৬, মার্চে ৯১, এপ্রিলে ১৩১, মে-তে ৩৬২, জুনে ৬৬৭ এবং ১৫ জুলাই পর্যন্ত ৪৭৫ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন।

আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, ‘ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ব্র্যাকসহ ইউনিয়ন পরিষদের সম্মিলিতভাবে সমন্বয় করে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করার উদ্যোগ না নিলে এটি আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনন্যা চাকমা বলেন, ‘ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ব্র্যাক থেকে বিনামূল্যে মশারি দেওয়া হয়। এর মেয়াদ থাকে তিন বছর। তৃতীয় বছর হওয়ার কারণে এবার মশারি কার্যকারিতা কমে গেছে। তাই ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা দুর্গম এলাকাগুলোতে বেড়েছে। এ বছর নতুন করে দুই হাজার ৩৫০টি মশারি বিতরণ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রবণতা বেশি, সেখানে স্বাস্থ্যকর্মী ও ব্র্যাকের কর্মীরা কাজ করছেন।’

বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুজিত দত্ত বলেন, ‘যাদের জ্বর হচ্ছে তাদেরই রক্ত পরীক্ষা করছি। সেইসঙ্গে মশারি বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। ইতোমধ্যে এসব ওষুধে অনেকে সুস্থ হয়েছেন।’

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। দুর্গম এলাকা হওয়ার স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি ব্র্যাকের কর্মীরাও কাজ করছেন। যেখানেই রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই ওষুধ পৌঁছানো হচ্ছে। যাতে কারও মৃত্যু না হয়, সেটি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিনামূল্যে পাঁচ লাখ মশারি বিতরণ করা হয়েছে।’