পিলার ভেঙে ঝুলছে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে লাখো মানুষের পারাপার

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার গাউসুরের ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর পিলার দেখে ভয়ে আঁতকে উঠবে যে কেউ। পিলারের নিচে নেই মাটি। বেরিয়ে আছে রড। ঝুলে আছে সেতুটি। ওপরের রেলিংগুলো ভেঙে পড়েছে একযুগ আগে। চলাচলের সময় দুলতে থাকে এটি। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তবু ঝুঁকি নিয়ে লাখো মানুষ সেতু দিয়ে চলাচল করছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, ২০০২ সালে ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে বেহাল অবস্থা সেতুটির। কাপ্তাই হ্রদে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বিকল্প যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই সেতু। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার গুলশাখালী, বগাচতর, ভাসান্যদম ও বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ চলাচল করে। সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল করতে না পারায় এসব ইউনিয়নের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনে বেড়েছে ব্যয়। দ্রুত সময়ে এখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। 

যেকোনো মুহূর্তে সেতুটি ভেঙে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা

গুলশাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. কবির হোসেন বলেন, ‘জেলায় কত উন্নয়ন সংস্থা। অথচ বছরের পর বছর সেতুটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। যেন দেখার কেউ নেই। বারবার পরিমাপ করে নেয়। পরে আর কোনও খবর পাওয়া যায় না। সেতু দিয়ে চলাচলের সময় কেঁপে ওঠে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।’

বগাচতর ইউনিয়নের বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ হয়। এমনকি কাপ্তাই হ্রদের পানি কম হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সড়কপথে পণ্য পরিবহনে ব্যয় বেড়েছে। সেতু থাকা অবস্থায় সহজে যাতায়াত করা যেতো। এখন ভয়ে অনেকে যাতায়াত করে না।’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনির হোসেন ও কাইয়ুম মিয়া জানান, সেতুর এ অবস্থার কারণে চলাচল করা যায় না। সেতুর পিলারে মাটি নেই, রড বের হয়ে আছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় মোটরসাইকেলসহ অনেকে পানিতে পড়ে আহত হন। দ্রুত সেতুটির নির্মাণের দাবি জানান তারা।

দ্রুত সময়ে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল বশর বলেন, ‘স্থানীয়রা জানেন সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কাজের প্রয়োজনে ঝুঁকি জেনেও চলাচল করছেন স্থানীয়রা। কারণ বিকল্প যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। আমি উপজেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি তুলে ধরেছি। কিন্তু সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে কোনও অগ্রগতি দেখছি না।’

২০০২ সালে ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণ করা হয়

গুলশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লংগদু উপজেলার তিন ইউনিয়নের মানুষই এই সেতু দিয়ে চলাচল করে না; বরং পাশের বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের মানুষও এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সেতুটি দ্রুত নির্মাণের জোর দাবি জানাই।’

ইতোমধ্যে এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেতুটি পরিদর্শন করেছেন বলে জানালেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) লংগদু উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘পরিদর্শন শেষে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরুর চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।’

তবে প্রকল্প না থাকায় কবে নাগাদ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহম্মদ শফি। তিনি বলেন, ‘সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাস হলে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এরপর কাজ শুরু হবে।’