চলাচলের রাস্তায় দেয়াল, গৃহবন্দি ২০ পরিবার

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার কলাবাগান গ্রামে রাস্তায় দেয়াল তোলার অভিযোগ উঠেছে পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে গ্রামের ২০টি পরিবার।

পানছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ভেতর দিয়ে চলাচলের রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন কলাবাগান গ্রামের মানুষ। গত শনিবার (৩ জুন) মাদ্রাসা কমিটি বিনা নোটিশে রাস্তাটিতে দেয়াল তোলে। এতে মাদ্রাসার পেছনে বসবাসকারী ২০টি পরিবার গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষক, স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এই রাস্তা ব্যবহার করতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পানছড়ি ইসলামি সিনিয়র মাদ্রাসার পেছনে ২০টি পরিবার বসবাস করে আসছে। ওই পরিবারের সদস্যরা মাদ্রাসার মধ্যে অবস্থিত রাস্তাটি চলাচলের জন্য নির্বিঘ্নে ব্যবহার করে আসছিল। ২০২০ সালে জাইকা প্রজেক্টের অধীনে কাঁচা রাস্তাটিতে ইট বসায় পানছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ। সে সময় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ রাস্তা চলাচলে বাধা দিলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌখিকভাবে গ্রামবাসীকে রাস্তা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। পরে ২০২১ সালে মাদ্রাসা কমিটি ১০ ফুট প্রশস্ত রাস্তাটি ৫ ফুট ছোট করে দেয়। সর্বশেষ শনিবার কমিটি দেয়াল তুলে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে।

কলাবাগান গ্রামের বাসিন্দা ও পানছড়ি ইসলামি সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা নুরুল আমিন বলেন, ‘আমি ওই মাদ্রাসার শিক্ষক। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে রাস্তা বন্ধ না করার জন্য বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। আমি মাদ্রাসা কমিটির সভাপতির বাড়িতে বেশ কয়েকবার গিয়ে অনুরোধ করেছি, যাতে ছোট করে হলেও রাস্তাটি রাখেন। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি। আমরা এখন কীভাবে চলাচল করবো জানি না।’

গ্রামের আরেক বাসিন্দা আব্দুল কাদির বলেন, ‘জন্মের পর থেকে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করেছি। আমাদের বাপ-দাদারাও চলাচল করেছেন। কিন্তু গতকাল কোনও নোটিশ ছাড়া রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জন্মের পর এলাকায় এমন অন্যায় দেখিনি। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

গ্রামের রাবেয়া খাতুন (৭৩) বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে দেখছি আমার শ্বশুর-স্বামী এ রাস্তা ব্যবহার করেছেন। আমার ছয় সন্তানকে এই মাদ্রাসায় পড়িয়েছি। আজ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি বন্ধ করে দিলো। এটা জুলুম। আমরা ইউএনও অফিসে দরখাস্ত দিতে যাচ্ছি। রাস্তা খুলে না দিলে আমরণ অনশন করবো।’

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম বলেন, ‘মাদ্রাসার মাঝখানে রাস্তা ব্যবহার করায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। এ জন্য রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার বলেন, ‘এটা অমানবিক। মাদ্রাসার পেছনের পরিবারগুলোর কথা বিবেচনা করতে হবে। এর একটা সমাধান দরকার।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানছড়ি ইসলামি সিনিয়র মাদ্রাসার সভাপতি রুবাইয়া আফরোজ জানান, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় মাদ্রাসার মাঝখান দিয়ে মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহন চলাচলে লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে। তাছাড়া পাঁচ ফুটের একটি বিকল্প রাস্তা আছে, জনগণের চলাচলে অসুবিধা হবে না।