ফসল কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা, কান্না থামছে না হালিমার 

নিজের কৃষি জমির ফসলের মরা গাছ বুকে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদছেন এক নারী। জমির মাটিতে গড়া-গড়ি করে তিনি বলছেন, ‘আমার মরা ছাড়া আর কি উপায় আছে, আমার সব শেষ কইরা দিছেরে। আমার মুখের খানা কাইড়া নিছে।’

রবিবার (৬ নভেম্বর) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পরিহলপাড়া এলাকায় গিয়ে হালিমা নামের ওই নারীর আর্তনাদ দেখা যায়। পরিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে ওই নারীর জমির ফসল কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পর হালিমা জমিতে গিয়ে সর্বনাশের চিত্র দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ইতোমধ্যে তার কয়েকটি কান্নার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।  

ভুক্তভোগী হালিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী ইউনুস মিয়া অসুস্থ। কাজ করতে পারেন না। ছেলে-মেয়ে খাওয়াতে হলে কিছু একটাতো করতে হবে। এই চিন্তা থেকে ২২ শতক জমি বর্গা ও এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সবজি চাষ শুরু করি। এরইমধ্যে দেড় মাস আগে পাশের বাড়ির ময়নাল মিয়া ও তার ছেলে সাব্বিরের সঙ্গে ঝগড়া হয়। সেদিন রাতে ময়নাল ও তার ছেলে সাব্বির লাউ গাছগুলো কেটে দেয়। তখন গ্রামের লোকদের কাছে বিচার দিলে প্রমাণ না থাকায় কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। শুক্রবার গাছের পাতা কুড়ানো নিয়ে তাদের সঙ্গে আবারও ঝগড়া হয়। সেদিন রাতে তারা আমার জমির বেগুন গাছ কেটে দিয়ে গেছে। শনিবার ফসল কাটা নিয়ে আমি ঘরে কান্নাকাটি আর মানুষকে জানানোর প্রস্তুতি নিলে তারা আবার শনিবার রাতে শিম গাছগুলোও কেটে দেয়। 

কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন হালিমা। তিনি বলেন, একবার-দুবার নয় এ পর্যন্ত পাঁচবার তার ফসলের জমি নষ্ট করেছে। গরিব ও অসহায় হওয়াতে কেউ দরবারও করতে আসে না। তিনি অভিযোগ করেন, জমির ফসল মাত্র একবার বিক্রি করেছি। বেগুনগুলো সম্পূর্ণ বিক্রির উপযোগী হয়নি। আমার এত টাকার ক্ষতি কীভাবে পূরণ হবে জানি না। এখন আমার মরা ছাড়া উপায় নেই। 

বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, আমি খবর শুনে সকালেই গিয়েছি। হিসাব করে দেখেছি এখন তার প্রায় ৬০ হাজার টাকার অধিক ফসল নষ্ট হয়েছে। তিনি লিজ নিয়ে জমিটা চাষ করেছেন। এভাবে তার ক্ষতি যে করেছে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আমরা দেখছি কোনও প্রকল্পের আওতায় তাকে সহযোগিতা করা যায় কিনা।

বুড়িচং থানার পরিদর্শক তদন্ত কবির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি খবর পেয়েই পুলিশ পাঠিয়েছি ঘটনাস্থলে। আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো।