সীমান্তে পড়েছিল মুমূর্ষু যুবক, বিজিবি-বিএসএফের বৈঠক শেষের আগে মৃত্যু

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার নারায়ণপুর সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে তুষার খাঁ (৩৫) নামের এক বাংলাদেশি যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বিজিবি। তবে কারা তাকে মেরে সীমান্তে ফেলে গেছে তা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কেউ বলতে পারেনি। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ যুবকের নিজ জেলা নওগাঁতে নেওয়া হচ্ছে। তিনি নওগাঁর রানিনগরের বালুভরা গ্রামের এলাকার মোসলেম খাঁর ছেলে।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তুষারের লাশ উদ্ধার করে ৬০ বিজিবি ব্যাটলিয়ান সদস্যরা। পরে তারা বুড়িচং থানায় হস্তান্তর করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) তুষার তার অসুস্থ ফুফা আবু তাহেরকে দেখতে নওগাঁ থেকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় আসেন। শুক্রবার ভোরে ভারতীয় স্থানীয়রা ফজরের নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফেরার পথে সীমান্তে এক যুবককে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তারা বিষয়টি বিজিবিকে জানান।

খবর পেয়ে বিজিবির শশীদল বিওপির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভারত অংশে ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন। এই নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফ বেলা ১১টায় আন্তর্জাতিক সীমানায় পতাকা বৈঠক করে কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। পরে বেলা ১২টায় মুমূর্ষ অবস্থায় পরে থাকা অজ্ঞাত ওই যুবকের ফুফু আসমা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। ততক্ষণে সে মারা গেছে। বৈঠকে ৬০ ব্যাটালিয়ান বিজিবি শশীদল বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল খালেক ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিফাই জেলার কলমচুরা থানা এলাকার ১৫০ বিএসএফের আশাবাড়ি বিএসএফ ক্যাম্প কমান্ডার শুকুর দাস নেতৃত্ব দেন। তারপর বিজিবি ও বিএসএফ আনুষ্ঠানিকতা সেরে তুষারের মরদেহ নিয়ে আসেন।

নিহতের ফুফু আসমা বেগম দাবি করেন, ‘আমার স্বামী কুমিল্লা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তুষার আমার স্বামীকে দেখতে গতকাল বুধবার ভোর সকালে হাসপাতালে আসে। সেখান থেকে সকাল ১০টায় শশীদল এলাকায় আমাদের বাড়ির উদ্দেশে বের হয়। তারপর থেকে খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে তার খোঁজ পাইনি। সে মাদকাসক্ত নয়।’

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কাজী তানভীর আবসাল বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বিকাল পৌনে ৪টায় ঘটনাস্থলে এসে পরীক্ষা করে তাকে মৃত পাই।’

শশীদল বিওপির বিজিবি কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমরা সকাল ৬টায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। ভারতের ১০ ফিট অভ্যন্তরে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়েছিল তুষারের অচেতন শরীর। আইন অনুযায়ী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। তারা চিকিৎসা না দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। পরে যখন আমরা পরিচয় নিশ্চিত হয়েছি ততক্ষণে তুষার মারা গেছে।’

বুড়িচং থানার ওসি ওপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, ‘লাশ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি। তবে প্রাথমিক সুরতহালে তুষারের শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’