হত্যাকাণ্ডের শিকার রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারের ১১ সদস্য কানাডার উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাতে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মুহিবুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন, তার ৯ ছেলে-মেয়ে, মেয়ে জামাইসহ ১১ জন কানাডার উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।
যদিও এর আগে গত বছরের শেষের দিকে মুহিবুল্লাহর পরিবার ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কিছু সদস্যসহ মোট ১১ পরিবারের সদস্য জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশে বসতি স্থাপন করার আবেদন করে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার এবং যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করা হয়।
আবেদনে তারা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া বা কানাডা নাম উল্লেখ করেন। এসব বিষয়ে আলোচনায় লিড করছেন এআরএসপিএইচ-এর অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ নওখিম।
শনিবার মুহিবুল্লাহর পরিবার কানাডা পৌঁছার কথা রয়েছে উল্লেখ করে শুক্রবার (১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টায় তাদের বরাত দিয়ে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন বলেন, ‘মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা শনিবার কানাডায় পৌঁছার কথা রয়েছে। এর আগে মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাতে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় বাংলাদেশ ছাড়েন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এসময় তারা রোহিঙ্গা শিবিরে মুহিবুল্লার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি খুলে দিতে বলেছেন। মুুহিবুল্লাহ হত্যার পর পরিবারের সদস্যরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ছিল।’
এদিকে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়া কুতুপাং শিবিরে নিজ কার্যালয়ে গুলিতে নিহত হন শীর্ষস্থানীয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করার পর থেকে তার ছোটভাই হাবিব উল্লাহ, স্ত্রী নাসিমা খাতুনসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এরপর থেকে তাদের ক্যাম্প থেকে সরিয়ে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টে কঠোর নিরাপত্তায় রাখা হয়। শুরু হয় তৃতীয় কোনও দেশে পাঠানোর আলোচনা।
উখিয়া কুতুপালং ট্রানজিট পয়েন্টে নিরাপত্তাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘গত দুই দিন আগে চিকিৎসার কথা বলে আন্তজার্তিক দাতা সংস্থার লোকজন মুহিবুল্লাহর পরিবারকে এখান থেকে নিয়ে যায়। পরে জানতে পেরেছি তাদের কানাডায় পাঠানো হচ্ছে।’
এআরএসপিএইচের এক নেতা বলেন, গত দুই দিন আগে মুহিবুল্লাহর পরিবারকে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা কানাডার উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়ছে। এ প্রক্রিয়ায় আমরাও আবেদন করেছিলাম। কারণ ক্যাম্পে আমাদের জীবনের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু-দৌজা নয়ন।