শহীদ বাবার পাশেই মেয়েকে দাফন, জানাজায় রিজভী ও সারজিস

জুলাই আন্দোলনে শহীদের কলেজছাত্রী মেয়েকে (১৭) পটুয়াখালীর দুমকির গ্রামের বাড়িতে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির আঙিনায় তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাংগাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ফাহিম, জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম। এ ছাড়া জেলা বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জানাজায় অংশ নেন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কিশোরীর দাদা দুপুরে কবর খোঁড়েন। এর আগে ছেলের মরদেহ দাফনের জন্যও কবর খুঁড়েছিলেন। রাতে নিজ বাড়ি সংলগ্ন বাবার কবরের পাশে কিশোরীকে দাফন করা হয়। 

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার বিকালে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে মরদেহ নিয়ে স্বজনরা দুমকির উদ্দেশে রওনা হন। তারা বাড়ি পৌঁছান সন্ধ্যায়। এর আগে শনিবার রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার বাসা থেকে কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ১৮ মার্চ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তিনি। গলায় ফাঁস নিয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেন বলে জানায় পুলিশ।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে ওই কলেজছাত্রীর বাবা গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার শহীদ বাবাকে দুমকি উপজেলার বাড়িতে দাফন করা হয়। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন কলেজশিক্ষার্থী। ধর্ষণের সময় এজাহারভুক্ত আসামিরা তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিল। এরপর ২০ মার্চ দুমকি থানায় মামলা করেন ছাত্রী।

মামলার এজাহারে উপজেলার একটি ইউনিয়নের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলা হওয়ার দিন রাতে এজাহারভুক্ত ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। ২১ মার্চ অন্য আসামিকে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে তাদের যশোর শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ওই ঘটনার পর থেকে কলেজছাত্রী ঢাকার আদাবর থানা এলাকার শেখেরটেকে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছিলেন। শনিবার রাতে সেখানেই আত্মহত্যা করেন। 

কলেজছাত্রীর চাচা বলেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ভাতিজি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। বিচার হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কায় ছিল। এরই মধ্যে এই ঘটনা ঘটলো। ভাতিজি অত্যন্ত সাহসী ছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছিল সবসময়। কিন্তু বিচারহীনতার ভয়, সমাজের অবজ্ঞা ও মানসিক চাপ শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।