দুদকের অভিযান দেখে পালালেন জেলা রেজিস্ট্রার, বললেন ঢাকার পথে আছি

বরিশাল জেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযান শুরুর পর গোপনে পালিয়ে গেলেন জেলা রেজিস্ট্রার মো. মহসিন মিয়া। বুধবার (১৬ এপ্রিল) বেলা আড়াইটা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন বরিশাল দুদকের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা।

দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযান চলাকালে একাধিক দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা কার্যালয়ের সবাই ভাগ করে নিতেন বলে নিশ্চিত করেছে দুদক টিম।

দুদক টিম সূত্রে জানা গেছে, দলিল রেজিস্ট্রেশন ও নকল উত্তোলনে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে চারটি দলিল দুদক কর্মকর্তারা জব্দ করেছেন। যেখানে সরকারি রাজস্ব খাতের উৎস কর কম দেখিয়ে ওই অর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ-বণ্টন হয়েছে। নগরের চরবদনা মৌজায় দলিল রেজিস্ট্রি নিষিদ্ধ হলেও ওই মৌজায় রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়া দুটি দলিল পাওয়া গেছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অভিযান শুরুর পর জেলা রেজিস্ট্রার মো. মহসিন মিয়া কার্যালয়ে আছেন বলে আমরা জানতে পারি। কার্যালয়ের নিচতলায় অভিযানের সময় বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর দোতলায় তার কক্ষে গিয়ে আর পাওয়া যায়নি। নিচতলায় অভিযানের সময় পালিয়ে গেছেন। এরপর তার কক্ষে আমরা অপেক্ষা করি। কার্যালয়ের কর্মচারীরা জানান স্যার ওয়াশরুমে গেছেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ সময় পরও না আসায় তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হয়। চারবার কল দেওয়ার পর রিসিভ করেন। এরপর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি ঢাকার পথে আছি বলে জানান। কোনও কিছুর প্রয়োজন হলে কার্যালয়ের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে বলেন তিনি। এরই মধ্যে কার্যালয়ের কর্মচারীরাও গা ঢাকা দেন। ফলে আর কাউকে পাওয়া যায়নি।’ 

রাজ কুমার সাহা আরও বলেন, ‘অভিযান চলাকালে চারটি দলিলের রেজিস্ট্রেশনে সরকারি ফি কম দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। সরকার নির্ধারিত উৎস কর না দিয়ে কম দিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দলিলে বিভিন্ন রকম দাম দেখিয়ে উৎস কর কম জমা দেওয়া হয়। এভাবে একাধিক দলিল করলেও ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কাগজ পাওয়া যায়নি। ওসব টাকা জেলা রেজিস্ট্রার থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা হয়েছে বলে কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার চরবদনা এলাকায় জমি রেজিস্ট্রেশনে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দলিল সম্পন্ন করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার। সে বিষয়টি ধরা পড়েছে। এ ধরনের দুটি দলিল জব্দ করা হয়। এর আগে এভাবে একাধিক দলল করে দিয়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার। ওগুলো টাকার বিনিময়ে ছাড়া কোনোভাবেই করা সম্ভব হয়নি। জেলা রেজিস্ট্রার ও তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল। অভিযোগের সত্যতা জানার জন্য জেলা রেজিস্ট্রারের কক্ষে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তাকে পাইনি।’

পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জেলা রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযানে যা পাওয়া গেছে তা এবং জেলা রেজিস্ট্রারের বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে দুদকের প্রধান কার্যালয় পাঠানো হবে। সেখান থেকে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’