আটক ও জরিমানাসহ একাধিক আইনের প্রয়োগ যেখানে ব্যর্থ সেখানে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা মেনেই বরিশাল নগরীর সড়কে চলছে যানবাহন। সড়কের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে ডিভাইডার তৈরি করে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে নিয়ম মেনে চলতে যানবাহন চালকদের বারবার একটি বার্তা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, ‘প্লিজ, সারিবদ্ধভাবে চলুন, আমাদের সাহায্য করুন’; ‘আমরা রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে সড়কে কাজ করছি।’
শিক্ষার্থীরা যানবাহন চালকদের এও বলছেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা না পেলে কোনোভাবেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়।’ কাগজ ও বিলবোর্ডে লেখা এসব নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের হাতে দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, যেখানে ট্রাফিক পুলিশকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হতো প্রতিদিন। সেখানে শিক্ষার্থীদের এমন ট্রাফিক পুলিশিং ব্যবস্থা সাধারণ নগরবাসী উপভোগের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছেন। এমনকি কেউ তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে চারদিক থেকে প্রতিবাদের আওয়াজ উঠছে।
নগরীর মোটরসাইকেলচালক মো. মামুন বলেন, ‘বেশিরভাগ সময় হেলমেট পরতাম না। জরিমানাসহ মোটরসাইকেল আটকানোর আইন থাকলেও যেকোনোভাবে ট্রাফিক পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে সড়কে চলাচল করতাম। এরপরও কেউ আটকালে কোনোভাবে ম্যানেজ করে ফেলতাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সড়কে আসার পর একদিনের জন্য হেলমেট ছাড়া বের হইনি। কারণ তারা মোটরসাইকেল আটকায় না, জরিমানাও করে না। তবে অনুরোধ জানায়। কিন্তু আটকালে লজ্জায় পড়তে হবে ভেবে হেলমেট ব্যবহার করছি এখন।’
নগরীর মাইক্রোবাসচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘যা ট্রাফিক পুলিশ পারেনি তা দেখিয়েছেন শিক্ষর্থীরা। কীভাবে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হয় তা করে দেখালেন তারা। তাদের নির্দেশ না মানার মতো কোনও যানবাহন চালক নেই। সবাই তাদের নির্দেশ মেনে সড়কে যানবাহন চালাচ্ছেন। এ জন্য শিক্ষার্থীদের স্যালুট জানাই। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।’
প্রাইভেটকারচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ থাকলে মাঝেমধ্যে আইন ভঙ্গ করতাম। প্রয়োজনে মাফ চাইতাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সড়কের দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনোভাবেই আইন ভঙ্গ করছি না। তারা যেভাবে নির্দেশ দেন সেভাবে গাড়ি চালাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা এই কাজ না করলে সড়কে শৃঙ্খলা আসতো না।’
নগরীর রিকশাচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে আইন ভঙ্গ করতাম প্রায়ই। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ফাঁকি দেওয়া যায় না। ওরা যেভাবেই হোক ধরে ফেলে। এরপর এমনভাবে লজ্জা দেয়, নিজের কাছেও খারাপ লাগে। তাই আইন ভঙ্গ না করে সারিবদ্ধভাবে রিকশা চালানোর চেষ্টা করছি আমরা।’
নগরীর বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘দেশটকে ওরাই পারবে মেরামত করতে। যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে মেরামত করলো সেভাবেই এখন সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে। ওদের দিয়ে সবকিছু সম্ভব। আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যত।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজস্ব আয়ের বড় একটি ধাপ হচ্ছে যানবাহনের লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক থাকা। সেই জায়গায় ফাঁকি আছে। কারণ শিক্ষার্থীরা কাগজ দেখতে পারছে না। দেখলেও এর বিরুদ্ধে কোনও ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে না। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অনেক যানবাহন মালিক ও চালক।’
বরিশাল সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক কাজী মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে শিক্ষার্থীরা যা করছে, এজন্য তাদের সাধুবাদ। তবে এ কাজ তাদের নয়। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়া এবং দেশপ্রেমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন এভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেও না। এ জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানাই। শিক্ষার্থীরা যা করে দেখালো, তা দেখে যেন শিক্ষা নেয় আমাদের ট্রাফিক পুলিশ।’