বিয়েতে যাওয়ার পথে মাইক্রোবাস খালে, সেতু নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

বরগুনার আমতলীতে বউভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে হলদিয়া ইউনিয়নে হলদিয়ার হাট ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ভেঙে বিয়ের যাত্রীবাহী মাইক্রোবাস খালে পরে কনেপক্ষের ৯ জন নিহত হয়েছেন। এলাকাবাসীর দাবি, ঠিকাদারের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার (২২ জুন) দুপুর ২টার দিকে বরগুনার আমতলী উপজেলার ৫ নম্বর চাওড়া ইউনিয়ন এবং ৪ নম্বর হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া হাট সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পরপরই সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার শাস্তি দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। এ সময় স্থানীয়রা ঠিকাদারের বিভিন্ন দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেন। স্থানীয়রা বলেন, ‘২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয়েছে এই সেতু। এত তাড়াতাড়ি কেন ভেঙে যাবে? ঠিকাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আজকে ৯টি তাজা প্রাণ ঝরে গেলো।

তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর আমতলী উপজেলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, হালকা যানবাহন ও মানুষের পারাপারের জন্য ২০০৫-০৬ অর্থবছরে স্বল্প ব্যয়ে ফুট ব্রিজ অর্থ প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ করা হয়েছিল সেতুটি। গত কয়েক বছর ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় আমতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।

তৎকালীন সময়ে সেতুটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান সেসময়ের হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারাভাবে কাজ শেষ করেন। নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর মাঝের বিম ভেঙে যায়। গত ১০ বছর ধরে ওই ভাঙা সেতু দিয়ে হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ চলাচল করে আসছেন।

কাউনিয়া ইব্রাহীম একাডেমির সহকারী শিক্ষক উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সঙ্গে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে সাইদুর রহমান সোহাগের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার (২১ জুন) কনেকে বরের বাড়ি তুলে আনা হয়। শনিবার কনেপক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে মাইক্রোবাসে এবং অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হলদিয়া সেতু পার হওয়ার সময় সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে যায়। এতে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা খালে পড়ে যায়। অটোরিকশায় থাকা যাত্রীরা সকলে সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা খালের পানিতে তলিয়ে যান।

খবর পেয়ে আমতলী ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে মাইক্রোবাসে থাকা কনেপক্ষের ৯ যাত্রী মারা যান।

দুর্ঘটনাকবলিত সেতু (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম, আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রুহুল আমিন, ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন ও নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মাইক্রোবাস ও অটোরিকশাটি সেতুর মাঝখানে আসামাত্রই ধপাস করে সেতু ভেঙে খালে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিক আমরা স্থানীয়দের নিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালাই। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ এসে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়।’

হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, ‘সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা কাজ করেছেন। ফলে নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই সেতুর মাঝখানের বিম ভেঙে যায়। ওই ভাঙা সেতু দিয়ে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ চলাচল করতো।’

অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘আমি যথাযথভাবেই সেতু নির্মাণ করেছি। সেতু নির্মাণকাজে কোনও অনিয়ম করিনি।’

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমতলীতে আমার যোগদানের আগে এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তবে যতটা জেনেছি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ফুট ব্রিজ প্রকল্পের অধীনে এই সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে যানবাহন চলাচলে আমরা বিধিনিষেধ আরোপ করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর যাত্রীবোঝাই মাইক্রোবাস নিয়ে সেতুতে ওঠায় লোড সইতে না পেরে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যদি সেতু নির্মাণে কোনও অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন: