কুড়িগ্রামে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির তাণ্ডব

কালবৈশাখী আর শিলাবৃষ্টির কয়েক মিনিটের তাণ্ডবে কুড়িগ্রামে শতাধিক বাড়িঘর ও কৃষি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার রাত ১১টার দিকে জেলার কয়েকটি উপজেলায় কালবৈশাখী আঘাত হানে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম শক্তিশালী ঝড়। ঝড়ের তাণ্ডবে দিনভর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকে জেলা শহরের বেশ কিছু এলাকা।

শনিবার রাতের এই ঝড়ে কুড়িগ্রাম সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা সদরের বেলগাছা ও হলোখানা ইউনিয়নে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপক্ষে ৮ থেকে ১০টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। মেরামতের সাধ্য না থাকায় এসব পরিবারের অনেকে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। ঝড়ে হলোখানা ইউনিয়নের চর হলোখানা এমদাদিয়া আলিম মাদ্রাসা এবং হলোখানা নুরনবী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ছাড়াও জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় বেশ কিছু স্থানে কালবৈশাখী তাণ্ডব চালিয়েছে। ঝড়ে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়ভিটা বাজারে অন্তত ১৪টি দোকানঘর লন্ডভন্ড হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সদরের হলোখানা ইউনিয়নের টাপুরচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদা ও ছকিনা জানান, তারা কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে গেছেন। আকস্মিক ঝড়ে তাদের ঘর দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। ঘরের টিন ও কাঠ পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী নেই।

মোরশেদা বলেন, ‘জানটা বাঁচিছে। ভিতরা তিনজন আছলং। মাথার উপরা ঘর ভাঙি পড়ছে। ধরনা ফ্যানসহ ভাঙি গার (শরীরের) উপরা পড়ছে। আমার শ্বশড়ি আঘাত পাইছে।’

ছকিনা বলেন, ‘তিনটা ঘর তিনটাই ভাঙি পড়ছে। ঘরের জিনসপত্র গুঁড়া হইছে। এলা কেমন করি ঠিক করমো, কোটাই থাকমো কোনও উপায় পাই না।’ শুধু মোরশেদা আর ছকিনা নন, ওই গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে, তীব্র ঝড়োবাতাস ও শিলাবৃষ্টির কারণে জেলায় বোরো ধান, সবজি ও আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনের বরাতে কৃষি বিভাগ জানায়, ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কারণে সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খামারবাড়ী কুড়িগ্রামের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ২১৮ হেক্টর বোরো ধান, ৯২ হেক্টর ভূট্টা, ৫১ হেক্টর সবজি এবং ১৬ হেক্টর পাটক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এই ক্ষয়ক্ষতি সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলায় বেশি।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছপালা অপসারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ররিবার সকাল থেকে কাজ করছে। সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য আমরা রাত থেকেই নির্দেশনা দিয়েছি। এ ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখাকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’

রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শহরের কয়েকটি স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল।