ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপটে বিশৃঙ্খল চট্টগ্রামের সড়ক, চলতি মাসে জব্দ ৩ হাজার

চট্টগ্রাম নগরীর সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। একসময় নগরীর অলিগলির মধ্যে এ রিকশা সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মূল সড়কে। বেপরোয়া এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রতিদিনই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এতে ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। সিএমপির ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে চলতি মাসে তিন হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করা হয়েছে।

১৮ এপ্রিল ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে নগরীর চকবাজার থানাধীন কাপাসগোলার নবাব হোটেল সংলগ্ন হিজড়া খালের নালায় পড়ে যায় মা, দাদিসহ ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিস। পরে মা ও দাদি উঠতে পারলেও পানিতে তলিয়ে যায় শিশু সেহরিস। নিখোঁজের প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর চাকতার খাল থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের দাবি, ওই রিকশাটির গতি ছিল খুব বেশি। যে কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নালায় পড়ে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনার পর টনক নড়ে প্রশাসনের। শুরু হয় ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান। চলতি মাসে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নগর ট্রাফিকের চারটি বিভাগ তিন হাজার ১৬৮টি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করেছে। এর মধ্যে সিএমপির দক্ষিণ ট্রাফিক বিভাগ ৯১৩টি, উত্তর বিভাগ ৯১৮টি, পশ্চিম বিভাগ এক হাজার ১৬৮টি এবং বন্দর বিভাগ জব্দ করেছে ১৬৩টি ব্যাটারি রিকশা। এসব রিকশা সিএমপির মনসুরাবাদ ও সদরঘাটে ডাম্পিং করা হয়েছে।

একসময় নগরীর অলিগলির মধ্যে এ রিকশা সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মূল সড়কেবুধবার (২৩ এপ্রিল) নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বাহির সিগনাল এলাকা থেকে কয়েকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেশ কয়েকজন ব্যাটারি রিকশার চালক। পরে থানাপুলিশ সড়ক থেকে তাদের সরে যেতে বলতে সেখানে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। পরে চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত ৩৩ জন ব্যাটারি রিকশা চালককে গ্রেফতার করা হয়।

সিএমপি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে নগরীর সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। শুধু ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ ছিল এ সিদ্ধান্ত। নেওয়া হয়নি কার্যকর কোনও পদক্ষেপ।

চট্টগ্রাম মহানগর অটোরিকশা-অটো টেম্পু মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক টিটু চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ৫০ হাজারের বেশি অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করছে। এসব রিকশা চলে বিদ্যুৎ দিয়ে। যে কারণে অনেক বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। এসব রিকশা চালানোর প্রশিক্ষণ নেই চালকদের। এর চেয়ে বড় সমস্যা, ব্যাটারি রিকশা বেড়ে যাওয়ায় নগরীতে যানজট বাড়ছে। ট্রাফিক পুলিশের রহস্যজনক আচরণের কারণে এসব রিকশা এতদিন অলিগলিতে চলাচল করলেও বর্তমানে মূল সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নগরীতে ৫০ হাজারের বেশি ব্যাটারি রিকশা চলাচল করছে। তার মধ্যে পুলিশ আটক করেছে মাত্র তিন হাজার। তাও আবার কয়েকদিন পরপর এসব গাড়ি সাড়ে তিন হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। ফলে পুনরায় সেগুলো সড়কে উঠছে। আমাদের দাবি রিকশা বন্ধ করা নয়, মূল কারণ মোটর এবং ব্যাটারি। অবৈধভাবে লাগানো ব্যাটারি ও মোটর খুলে নিলে মূল সড়কে আর ব্যাটারি রিকশা আসবে না বলে আমরা মনে করি।’  

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো শহরের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। সম্প্রতি একটি শিশু খালে পড়ে মারা গেছে, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। ব্যাটারি রিকশাগুলো দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে, রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আপনারা অনুগ্রহ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোতে চড়া থেকে বিরত থাকুন। আপনারা যদি তাদের (চালকদের) নিরুৎসাহিত করেন, তাহলেই তারা রাস্তায় নামা বন্ধ করবে।’ 

নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) নেছার উদ্দিন বলেন, ‘ব্যাটারি রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। ইতোমধ্যে তিন হাজারের বেশি ব্যাটারি রিকশা জব্দ করা হয়েছে। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে।’