খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। কিন্তু শিক্ষার্থীরা দাবিতে অনড় রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনালাপকালে শিক্ষা উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীরা উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ফোনালাপে যুক্ত হওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষা উপদেষ্টা কুয়েটের আন্দোলন ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে অনশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেন। উপদেষ্টা আশ্বস্ত করে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি সম্পর্কে সরকার সচেতন রয়েছে। একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল অতি দ্রুত খুলনা যাবে। কুয়েট কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চলতি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তারা। তবে শিক্ষার্থীরা উপদেষ্টাকে বলেছেন ডিসির পদত্যাগ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের ২৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে রাত পৌনে ৮টায়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে দুই জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১২টায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল সেন্টারের কর্মকর্তারা তাদের চিকিৎসা দেন। আরও অসুস্থ হয়ে পড়া দুই শিক্ষার্থীকে তাদের অভিভাবকরা বাড়িতে নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ‘কুয়েটের শিক্ষার্থী আন্দোলন ইস্যুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইউজিসি থেকে একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কুয়েটে যাবে। তারপর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।’
অনশনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কুয়েট ভিসিকে অপসারণ করতে হবে। অথবা তাকে নিজে থেকে পদত্যাগ করতে হবে। খুলনায় যে গরম, এখানে প্রায় ৪৫ ডিগ্রির মতো তাপ অনুভব হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমরা কতক্ষণ বেঁচে থাকবো জানি না।’
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের জানিয়েছেন, কুয়েটে তদন্ত কমিটি আসছে। আমরা এই তদন্ত কমিটির নিন্দা জানিয়েছি। ভিসিকে অপসারণ না করে তদন্ত কমিটি কেন আসবে।’
এদিকে, সোমবার দিনগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দফতরের পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক অনশন ভাঙার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন। এ সময় তারা জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙানোর চেষ্টাও করেন। তবে শিক্ষার্থীরা সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের পর থেকে শিক্ষার্থীরা ভিসি, প্রো-ভিসির অপসারণসহ ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ভিসির বাসভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় সার্বিক নিরাপত্তার কারণে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না মেনে হলে অবস্থান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ঈদুল ফিতরের পর ১৩ এপ্রিল বেলা ৩টায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এরপর তারা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। বিকালে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান। তারা হলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য রাত ৮টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাত্রিযাপন করেন। এ অবস্থায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ২ মে হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত না মেনে শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন। এরপর এক দফা নিয়ে তারা ২১ এপ্রিল অনশন শুরু করেন।