পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘যশোরের দুঃখ ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই লক্ষ্যে সেনাবাহিনী হরি, ভদ্রা ও আপারভদ্রা এই তিন নদী খনন করবে।’ মঙ্গলবার দুপুরে জলাবদ্ধ ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে এসে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় এ কথা বলেন।
স্থানীয় ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফিংকালে তিনি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রায় চিরস্থায়ী হয়ে ওঠা ভবদহ সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা যাবে না। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করেছে। এই কাজ দীর্ঘমেয়াদি হবে। স্বল্পকালীন সমাধান হিসেবে আমডাঙ্গা খাল খনন করে পানি বের করা হয়েছে। এর ফলে অনাবাদী থাকা ২০ হাজার হেক্টরের মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষ হয়েছে। এই খাল আরও চওড়া করে খনন করা হবে। এতে আশা করা যায়, অনাবাদী জমি কমে আসবে।’
হাওর অঞ্চলের মতো ভবদহ এলাকার জন্যও স্থায়ী বরাদ্দ রাখা যায় কিনা তা বিবেচনায় নেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলা শুরু হয়েছে। শেষে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সবার জন্য ভালো হয়, এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, ভবদহ জলাবদ্ধতা এলাকার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে– উপদেষ্টা রেজওয়ানা চৌধুরী এই বক্তব্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানান সেখানে উপস্থিত কয়েকজন কৃষক। তাদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড উপদেষ্টার কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছে। তাদের এই এলাকায় জল নেমে যাওয়া জমির শতকরা ২০ শতাংশ জমিতে ধান হয়েছে।
তিন উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আগমনের খবরে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের কাছে জড়ো হন ভুক্তভোগীরা। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিণামদর্শী প্রকল্প বাদ দিয়ে জোয়ারাধার বা টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু করার দাবি করেন। একপর্যায়ে ৩০-৩৫ জনের একদল লোক টিআরএম বাস্তবায়নের বিরোধিতা করে স্লোগান দিতে দিতে ভবদহ বাজারে আসেন। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, টিআরএমের বিরোধিতাকারীরা মূলত মাছের ঘের মালিকদের ভাড়া করা লোক। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েক ব্যক্তি সাংবাদিকদের কাছে তা স্বীকারও করেন।
এর আগে সকালে তিন উপদেষ্টা হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে যশোরের অভয়নগরে আসেন। সেখানে তারা বোরো ধান কাটা উৎসবে যোগ দেন।
দুপুরে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।