আপসনামা নিয়ে দুই পক্ষের দুই মত, উত্তপ্ত আদালত প্রাঙ্গণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে কুমিল্লার আদালত প্রাঙ্গণ উত্তপ্ত ওঠে। এ ঘটনায় হাজিরা দিতে আসেন আনুমানিক দুই ডজন আইনজীবী। এ সময় আদালতের বাইরে স্লোগান দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এজলাস থেকে বেরিয়ে আইনজীবীরা জানালেন বাদী আপসনামা দিয়েছেন। আর বাদী এসে বললেন, আপসনামা দূরে থাক, এমন কোনও কথাও হয়নি। পরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে যৌথবাহিনী।

জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩ আগস্ট কুমিল্লার পুলিশ লাইন এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বহু ছাত্র-জনতা আহত হয়। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইনস এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণসহ হামলার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ ২৬১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

মামলায় অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের অধিকাংশই আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও মামলায় আসামির তালিকায় আইনজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন।

১১ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো. ইনজামুল হক রানা বাদী হয়ে কোতয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন। ইনজামুল কুমিল্লা শহরতলির ডুমুরিয়া চাঁনপুর এলাকার মো. আমির হোসেনের ছেলে।

এই মামলার আসামিরা হলেন– কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আছেন– মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকন, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনুস ভূঁইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁঞা, সাবেক সভাপতি আবদুল মমিন, সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জহিরুল ইসলাম, সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল-আমিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।

হাজিরা নিয়ে উত্তপ্ত আদালত

বেলা ১১টার দিকে আদালতে আইনজীবী ও অন্য আসামিরা হাজির হলে আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় জনতা। এ সময় তারা ‘স্বৈরাচারের গতিতে আগুন জ্বালো একসাথে,’ ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ছাত্র জনতার অ্যাকশন’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা, হুশিয়ার সাবধান’সহ নানা স্লোগান দেন। এতে আদালত চত্বর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে বেলা দেড়টার কিছু সময় আগে কুমিল্লার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মাহাবুবুর রহমান হাজিরার দ্বিতীয় শুনানির সময় নির্ধারণ করেন বেলা আড়াইটার দিকে।

এদিকে, উত্তপ্ত ছাত্র-জনতার সামনে মামলার বাদী ইনজামুল হক রানা, মাছুমুল বারি কাউসারসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ‘যদি আজ আইনজীবী বলে মামলার আসামিদের ছাতার আওতায় না এনে ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে ছাত্র-জনতা নিজেই এসবের বিচার করবে। আমরা আদালতের ওপর আস্থা রাখি। আমরা বিশ্বাস করি, আদালত আইনের সঠিক ব্যবহার ও জনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মামলা পরিচালনা করবে।’

আপসনামা নিয়ে দুই পক্ষের দুই মত

আপসনামা নিয়ে কুমিল্লার আদালতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মোমেন ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে ফোনে বলেন, ‘আজকের উপস্থিত ১৮ থেকে ১৯ জনের জন্য বাদী নিজেই আপসনামা দিয়েছেন। আমরা তা আদালতে পেশ করেছি।’

বাদী বলেছেন, আপসনামা দেননি। এ বিষয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি– এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? এমন প্রশ্নে আব্দুল মোমেন ফেরদৌস বলেন, ‘অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই, কারণ সেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়া আছে। তারা ভুয়া বলছে কেন জানি না।’

মামলার বাদী ইনজামুল হক রানা বলেন, ‘আমরা কোনও কথাই বলিনি, আপসের বিষয়ে জানি না কে এসব ভুয়া কথা বলছে। এসব ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া কিছুই নয়।’