যশোরে দুপুরে আ.লীগ নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান, সন্ধ্যায় ঝটিকা মিছিল

আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে যশোর পুলিশ। তবে অভিযানকালে কাউকে গ্রেফতার বা হেনস্তা করা হয়নি। পুলিশের দাবি, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আটক, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের অংশ হিসেবে এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। রবিবার দুপুরে এ অভিযান চালানো হয়।

এদিকে, সন্ধ্যায় শহরের কাঁঠালতলা এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য মতে, আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন চাকলাদারসহ নেতারা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। এরপরও আজ রবিবার দুপুরে ডিবি পুলিশের দুটি গাড়ি ও পুলিশের পাঁচটি গাড়িসহ মোট সাত গাড়িতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ প্রথমে যশোর শহরের কাঁঠালতলা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বাড়িতে যায়। তবে ওই বাড়িতে বর্তমানে কেউ বসবাস করে না। গত ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দেন।

সূত্র জানায়, বাড়িটিতে সংস্কার কাজ চলছে। পুলিশ দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পর শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে চলে যায়। এরপর পুলিশের টিমটি পার্শ্ববর্তী এলাকায় যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনের বাসায় যায়। সেখান থেকে শহরের কদমতলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েলের বাসাতে যায়। সেখানে পুলিশ সদস্যরা জুয়েলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে চলে যান। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিমটি কাজীপাড়াতে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইফুজ্জামান পিকুল, ঢাকা রোড এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের বাড়িতে যায়। এসব বাড়িতে গিয়েও কাউকে আটক বা কিছু উদ্ধার না করে চলে যান পুলিশ সদস্যরা।

যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জুয়েলের ভাবি জ্যোৎস্না বেগম জানান, তাদের বাসায় পুলিশ এসে জুয়েলের খোঁজ খবর নেয়। জুয়েল অনেক আগে থেকেই বাড়িতে নেই জেনে চলে যায়। তবে তারা কাউকে হেনস্তা করেনি।

ডিবি পুলিশের  ওসি মঞ্জরুল হক ভূঁইয়া  বলেন, ‘কোনও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়নি। অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার অভিযানের অংশ হিসেবে অভিযানে যায় পুলিশ। তবে কাউকে আটক বা কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’

এদিকে, সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন চাকলাদারের বাড়ির সামনে কাঁঠালতলা মোড় থেকে একটি ঝটিকা মিছিল বের হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিল থেকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু,’ ‘শেখ হাসিনা ফিরবে বীরের বেশে’ স্লোগান দেওয়া হয়।

কয়েকটি ইজিবাইকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এসে মিছিলটি বের করেন। মিছিলটি উপশহর বাবলাতলা ব্রিজের কাছ থেকে ঘুরে ফের কাঁঠালতলা মোড়ের দিকে চলে যায়। মিছিলে থাকা নেতাকর্মীরা সবাই বাইরের এলাকা থেকে আসা। তাদের স্থানীয়রা কেউ চিনতে পারেনি।

জানতে চাইলে কোতয়ালি থানার ওসি আবুল হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মিছিল করেছে, এমন কোনও তথ্য আমার জানা নেই।’

অবশ্য মিছিলের বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান স্থানীয় একজন সাংবাদিককে জানিয়েছেন, ওই স্থানের কাছাকাছি পুলিশের টিম রয়েছে। তাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপির একটি পক্ষ কোনও একটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সেখানে মিছিল করেছে।’

এদিকে, মিছিলের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘বিএনপির কোনও পর্যায় থেকে কাঁঠালতলা এলাকায় কোনও ধরনের মিছিল হয়নি। আমি শুনেছি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে মিছিল করেছে। মিছিল শেষে তারা আমবাগানের ভেতর দিয়ে পালিয়ে যায়।’