চা শ্রমিকদের অন্যতম উৎসব ‘ফাগুয়া’ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগানে উদযাপন হয়েছে। ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শনিবার বিকালে ফুলছড়া চা বাগান মাঠে এ আয়োজনে স্থানীয়দের পাশাপাশি অংশ নেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি উপদেষ্টা সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এই উৎসবে উপস্থিত থাকার জন্য ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত গিয়েছিলাম, আপনাদের অনুষ্ঠানে যোগদান করবো বলে। কিন্তু বিশেষ কাজে আবার ঢাকা ফিরতে হয়েছে। আগামী বছর আমি সরকারে না থাকলেও দেশেই থাকবো। তখন এই ফাগুয়া উৎসবে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করবো।’
ফাগুয়া উৎসব ‘পরব’ বা ‘হোলি’ নামেও এটি পরিচিত। প্রতি বছর ফাল্গুনে দোল পূর্ণিমা থেকে শুরু করে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত থাকে এই উৎসবের ব্যাপ্তি। উৎসবকে কেন্দ্র করে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসেন মেয়েরা। প্রতিটি চা বাগানে তরুণ-তরুণীরা রঙিন সাজে সেজে নাচের দল নিয়ে বের হন। মাদলের তালের সঙ্গে পাহাড়ি গানের সুর তৈরি করে এক অন্যরকম আবহ। বাগান কর্তৃপক্ষ ফাগুয়া উপলক্ষে চা শ্রমিকদের ছুটি ও উৎসব ভাতা দিয়ে থাকে।
অনুষ্ঠানে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম, চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পরিমল সিং বাড়াইক বক্তব্য দেন। এ ছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন ফাগুয়া উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও এনসিপি নেতা প্রীতম দাশ।
অনুষ্ঠানে সাতগাঁও চা বাগানে শ্রী মোহন লাল কৈরী ও তার দল ভোজপুরী নৃত্য হোলি গীত পরিবেশন করেন। এ ছাড়া নিউ সমনবাগ চা বাগানের মুক্তি কুর্মী ও তার দল কুরমালি নৃত্য, জঙ্গলবাড়ী চা বাগানের ভেরুনেকা কন্দ ও তার দল কুই নৃত্য, শমসের নগর চা বাগানের শেরতেলু তেলেগু-গনেশ আলমিক ও তার দল গানতি বেজনী নৃত্য, শিশেলবাড়ী চা বাগানের ভাগ্যরাজ বল্লম ও তার দল ওড়িয়া নৃত্য, মিরতিংগা চা বাগানের ফুলমনি ও তার দল শারুল নৃত্য, ভুরভুড়িয়া চা বাগানের পূজা রিখিয়ানস ও তার দল কাঠি নৃত্য, কাকিয়াছড়া চা বাগানের সীমা মুন্ডা ও তার দল মুন্ডারী নৃত্য, সিন্দুরখান চা বাগানের পুনম বাড়াইক ও তার দল ডমকচ নৃত্য, একই বাগানের চন্দন বুনার্জি ও তার দল ওড়িয়া ভজন নৃত্য, লাখাইছড়া চা বাগানের স্বপন সাঁওতাল ও তার দল সাঁওতাল নৃত্যসহ ১৮টি চা বাগানের চা শ্রমিক নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা তাদের নিজস্ব নৃত্য পরিবেশন করে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন– জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত প্রশাসক মো. বুলবুল আহমেদ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহাগ মিলু ও শারমিন সুলতানা, ছানা পুতুলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।