নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় উরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে একটি মাজারে হামলার ঘটনার ঘটেছে। এ সময় হামলাকারীরা ভাঙচুর করে উরসের আয়োজন পণ্ড করে দেয়। সোমবার রাতে ওই মাজারে স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা লাঠি নিয়ে মিছিল করে এ হামলা চালায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাসকা বাজারসংলগ্ন স্থানে হজরত শাহ নেওয়াজ ফকির ওরফে ল্যাংটা পাগলার মাজার রয়েছে। ওই মাজারে দীর্ঘদিন ধরে বার্ষিক উরস পালন করে আসছেন ভক্তরা। এবার ৬৪তম বার্ষিক উরস পালনের প্রস্তুতি নেয় মাজার কমিটি। তবে পবিত্র রমজান মাস থাকায় আগামী বুধবার শুধু মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মাজার কমিটি। এ উপলক্ষে তোরণ নির্মাণসহ মাজারের আশেপাশে আলোকসজ্জা করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে সোমবার রাতে স্থানীয় মসজিদে তারাবির নামাজের পর ‘তৌহিদি জনতা’র নামে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ‘তারাবি নামাজের পর বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হঠাৎ করে লাঠিসোঁটা নিয়ে মাজারে হামলা চালায়। হামলাকারীরা মাজারে নির্মাণ করা তোরণ, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জার সরঞ্জামাদি ভেঙে ফেলে। এতে উরস পণ্ড হয়ে যায়।’
তিনি আরও জানান, মাজারে হামলার খবর পেয়ে এলাকার শত শত ভক্ত জড়ো হন। পরে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে।
হামলাকারীদের একজন বলেন, ‘এখানে তারা মাজার করবে, গান-বাজনাসহ নাচানাচি ও মাদকসেবন করবে– এটি আমরা তৌহিদি জনতা করতে দেবো না। আমরা বেশ কয়েকবার তাদের বুঝিয়েছি। এসব হারাম কাজ না করার জন্য। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করে গেট, প্যান্ডেল বানানোসহ উরসের আয়োজন করে। আমাদের দাবি একটাই, এসব বেদাত কাজকর্ম চলবে না। আর মাজার কমিটি আমাদের কথা না মেনে কেনো উরস আয়োজন করলো তা তৌহিদি জনগণের কাছে ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না করলে আমরা তৌহিদি জনতা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।’
মাজার কমিটির সভাপতি আলী উছমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এখানে ভক্তরা উরস পালন করে আসছেন। এবার রমজান মাস থাকায় আমরা শুধু মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ‘তৌহিদি জনতা’র নামে কিছু লোক লাঠিমিছিল করে মাজারে হামলা চালায়। এ সময় ভক্তরা খবর পেয়ে মাজারে আসতে থাকেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার ওসি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগামী বুধবার মাজারের উরস করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কমিটির লোকজন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।’