যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মর্যাদা ফিরে পাচ্ছে। কয়েক বছর পর এবার একুশে ফেব্রুয়ারিতে এখানে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে সরকারিভাবে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরপরই যশোরের তখনকার প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘যশোর কলেজে’ স্থাপিত শহীদ মিনারে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো। পরে কলেজটির নাম মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে করা হয়। পুরনো ক্যাম্পাস শহরের পুরাতন কসবা থেকে স্থানান্তরিত হয় খড়কি এলাকায়। স্বাধীন বাংলাদেশে এখানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিলেন।
আওয়ামী সরকারের সময় যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু শহরের শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের পাশে অপ্রশস্ত একটি স্থানে নতুন একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে এর নাম দেন ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার’। যে স্থানে এটি তৈরি করা হয় সেখানে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। অর্ধশিক্ষিত ওই ব্যক্তির সিদ্ধান্তে সেই সময় কেউ খুশি হয়নি। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ কার্যকর প্রতিবাদও করতে পারেনি। বিএনপি ও কয়েকটি বাম দল ছাড়া অন্যরা নতুন শহীদ মিনারে যেতে বাধ্য হয়।’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুরনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন প্রস্তুতি কমিটির’ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যশোরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বলতে এমএম কলেজের শহীদ মিনারকে বোঝাবে। এই শহীদ মিনারেই এবার ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানি না। যদি সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে তা খুশির কথা। যদিও শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কে নির্মিত শহীদ মিনারে আমরা কোনোদিনই যাইনি। এমএম কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত শহীদ মিনারকেই আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মানি। আমাদের দল বরাবরই দাবি করে আসছিল এই শহীদ মিনারেই যেন শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। সেখানে এখন পর্যন্ত আমাদের পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী যুবমৈত্রীসহ বিভিন্ন সংগঠন ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছে।’
আজকের সভায় স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রধান, প্রেস ক্লাব সভাপতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।