বাবার মৃত্যুর সাত দিন পর থানায় গিয়ে তাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে এক কিশোরী (১৬)। পুলিশ তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধান করছে।
জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানার দেয়ানা উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ হুমায়ুন কবির। তার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে বিবাহিত। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে দেয়ানার বাড়িতেই থাকতেন ব্যবসায়ী হুমায়ুন। থানায় হাজির হওয়া কিশোরী সুমাইয়া তার ছোট মেয়ে। সে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
জানা গেছে, গত ৫ জুলাই দৌলতপুর এলাকার ব্যবসায়ী শেখ হুমায়ুন কবীরের মরদেহ ঘর থেকে উদ্ধার হয়। হৃদরোগে তার মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়। বলা হয়, আগের রাতে ভাত খেয়ে ঘুমাতে যাওয়া ব্যবসায়ী হুমায়ুন সকালে ঘুম থেকে ওঠেননি। মৃত্যুর সাত দিন পর ১২ জুলাই রাতে দৌলতপুর থানায় হাজির হয় তার ছোট মেয়ে সুমাইয়া। পুলিশকে সে বলে, ‘বাবাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করেছি। আমাকে গ্রেফতার করুন।’
হুমায়ুন কবিরের চাচতো ভাই এস এম মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই ধার্মিক ও ভালো লোক ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরের পর গিয়ে লাশ দেখে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু না। তার হাতে দুটো ছিদ্র ছিল। সেগুলো কোথা থেকে আসলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই মেয়ের চলাফেরা এবং আচরণে হুমায়ুন কবির খুবই বিরক্ত ছিলেন। এ নিয়ে প্রায়ই মেয়েদের রাগারাগি করতেন তিনি।’
হুমায়ুনের প্রতিবেশী দিনমজুর শেখ আমির হোসেন বলেন, ‘ভোর ৬টায় শুনেছি হুমায়ুন ভাই স্ট্রোক করে মারা গেছেন। তার বাড়ি গিয়ে দেখে মনে হয়েছে, যেন নিরিবিলি শুয়ে আছেন। চেহারা স্বাভাবিক ছিল।’
হুমায়ুন কবিরের বড় মেয়ে মরিয়ম বলেন, ‘বাবার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশার ভেতরে আছি। এখনও মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়নি। পারিবারিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। খুব চাপের ভেতর আছি।’
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘১২ জুলাই হুমায়ুন কবিরের ছোট মেয়ে সুমাইয়া বিনতে কবির থানায় আসে। সে বলে, “আমি আমার বাবাকে রাতে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছি।” কিন্তু পরক্ষণেই আবার বলে, “আমি হত্যা করিনি, আমার ঘাড়ে জিন আছে, সে হত্যা করেছে।” তার অসংলগ্ন কথাবার্তায় আমরা বিভ্রান্ত হচ্ছি না। অনুসন্ধান করছি। সুমাইয়ার মা বলছেন, তার মেয়ের মানসিক সমস্যা আছে। তিন বছর আগে তাকে একবার মানসিক ডাক্তার দেখানো হয়েছিল।’
ওসি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। এ কারণে ঘটনাটি নথিভুক্ত হয়নি। সুমাইয়াকে খুলনা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’